দেশপরিবেশবাংলাদেশ

যানজটে বছরে ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা—নির্বাচনী ইশতেহারে সমাধান চায় যাত্রীরা

যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনায় ভয়াবহ পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে যানজট ও দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা চায় সংগঠনটি।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: রাজধানীতে যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা এবং গত ১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৬ হাজারের বেশি মানুষ—এমন ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সুস্পষ্ট সমাধান দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ‘যাত্রী অধিকার দিবস’ উপলক্ষে শনিবার আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সংগঠনটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে একটি কার্যকর পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

ভয়াবহ পরিসংখ্যান: যানজট ও দুর্ঘটনার চিত্র

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এই সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য এবং সামাজিক জীবনে এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে। তিনি কিছু উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন:

  • সড়ক দুর্ঘটনা: গত ১১ বছরে (২০১৪-২০২৫) দেশে ৬২,৬১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৬,৬৯০ জন নিহত ও ১,৫৩,২৫৭ জন আহত হয়েছেন।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, শুধু ঢাকার যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, যার বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা।
  • জ্বালানি অপচয়: যানজটের কারণে বছরে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার জ্বালানি অপচয় হয়।

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যানজটের আর্থিক ক্ষতির চেয়েও ভয়াবহ এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব। তিনি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও খিটখিটে মেজাজ বাড়ছে। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা এমনকি ফুসফুস ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে। সামাজিক জীবনেও এর প্রভাব মারাত্মক। একটি গবেষণার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, যানজটের কারণে সৃষ্ট বিরক্তিতে সংসার ভাঙার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

নীতিগত ব্যর্থতা ও বর্তমান পরিস্থিতি

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনটি জনগণের মতামত উপেক্ষা করে তৈরি হওয়ায় এটি সড়ক দুর্ঘটনা বা যানজট কোনোটিই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, “উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাবে দেশের পরিবহন খাত এখন মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও অটোরিকশার মতো ছোট যানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ৫৬ শতাংশ মানুষ এখন ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে।”

বিগত সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে যানজট এখন শহর ছেড়ে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সড়ক খাতে জরুরি সংস্কার কার্যক্রম শুরু করারও আহ্বান জানান।

আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। বক্তারা একমত হন যে, সড়ক নিরাপত্তা ও যানজট নিরসন এখন একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এর সমাধানের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button