অপরাধপ্রতারনাবাংলাদেশ

কাবিননামা কি এখন প্রতারণার নতুন হাতিয়ার? সমাজে বাড়ছে উদ্বেগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: বিয়েকে পুঁজি করে দেশে এক নতুন ধরনের সিন্ডিকেট ব্যবসা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, যা “কাবিন ব্যবসা” নামে পরিচিতি পাচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র কিছু অসাধু নারীকে ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের কাবিনের বিনিময়ে বিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে তালাক দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে হাজারো পুরুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন এবং পরিবারগুলোতে নেমে আসছে বিপর্যয়।

প্রতারণার কৌশল: যেভাবে পাতা হয় ফাঁদ

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্রটি প্রথমে আর্থিকভাবে সচ্ছল ও সম্মানিত কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে। এরপর বিয়ের আলোচনায় ১০ থেকে ২০ লাখ বা তারও বেশি অঙ্কের কাবিন ধার্য করা হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, যৌতুক বা পরকীয়ার মতো মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।

এরপর সেই অভিযোগকে পুঁজি করে স্বামীকে আইনি ও সামাজিকভাবে অপরাধী সাজিয়ে তালাক দেওয়া হয় এবং কাবিনের সম্পূর্ণ টাকা আদায় করা হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চক্রের সদস্যরা এতটাই পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যে, নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও পুরুষদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, কিছুদিন পর একই নারী নতুন কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে পুনরায় বিয়ের পিঁড়িতে বসে এবং একই প্রতারণার পুনরাবৃত্তি ঘটায়।

নারী অধিকার আইনের অপব্যবহারের অভিযোগ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চক্রটি নারী অধিকার ও সুরক্ষা আইনকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা নিরপরাধ পুরুষদের হয়রানি করছে। এর ফলে একদিকে যেমন প্রকৃত নির্যাতিত নারীরা বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়ছেন, অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে বিয়ে নিয়ে এক ধরনের ভীতি ও আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই অভিযোগ করছেন, “নারী অধিকারের নামে পুরুষরা আজ অসহায়।”

সামাজিক অবক্ষয় ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা

এই পরিস্থিতিকে একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কাবিনের মূল উদ্দেশ্য হলো নারীর সম্মান ও আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কিন্তু এটি এখন লোভ ও ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা যদি এখনই বন্ধ না করা হয়, তবে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দশকে শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী যুবকরা বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত হবেন, যা পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করে দেবে।

প্রতিকার কী? উচ্চ কাবিনের প্রতিযোগিতা বন্ধের দাবি

এই সংকট থেকে উত্তরণে সামাজিক ও আইনগত—উভয় দিক থেকেই পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।
১. সামাজিক সচেতনতা: বিয়ের ক্ষেত্রে উচ্চ কাবিনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। কাবিন যেন সম্মানের প্রতীক থাকে, বিলাসিতা বা ব্যবসার উপলক্ষ না হয়।
২. ইসলামী মূল্যবোধের অনুসরণ: ইসলামের মূলনীতি অনুযায়ী, দেনমোহর হওয়া উচিত স্বামীর সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে। ৩০ গ্রাম রুপার সমপরিমাণ অর্থ (১০ দিরহাম) দেনমোহরের যে নজির রয়েছে, তা অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকে।
৩. আইনের কঠোর প্রয়োগ: এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি, কাবিন সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে আরও গভীর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা, যাতে কেউ আইনের অপব্যবহার করতে না পারে।

মূলত, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমেই এই “কাবিন ব্যবসা” নামক প্রতারণার ফাঁদ থেকে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button