অপরাধচট্টগ্রামদেশবাংলাদেশরাজনীতিরাজনীতিসংগঠন

চট্টগ্রামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে মরিয়া ফ্যাসিস্ট দোসরদের

মোঃ জুবায়ের: আগস্ট মাসের ব্যার্থতাকে ঘিরে আবারও চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গুপ্তচক্রান্ত ও সন্ত্রাসী তৎপরতার গন্ধ স্পষ্ট হচ্ছে। নগরীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম নগরীকে ঘিরে সন্ত্রাসের নতুন জাল বিস্তার করছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী ব্যাবসায়ী লেবাসধারী একটি চক্র। গডফাদার হিসেবে উঠে এসেছে বহুল আলোচিত আবুল কাশেম ওরফে পিয়াজ কাশেমের নাম, যার সাথে রয়েছে আরো দুই যুবলীগের নেতা আবু তাহের ও সাদ্দাম মিলিয়ে গঠন করেছে শক্তিশালী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক।

বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এ চক্র চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, টেরিবাজার, লালদিঘী, কোতোয়ালী,মোড়,বন্দর,ইপিজেড,চকবাজার,

পটিয়ার মনষারটেক ও শান্তির হাটসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশৃঙ্খলা ও সহিংস পরিবেশ তৈরিতে সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে গেলো আগস্ট মাসের ব্যার্থতাকে ঢাকতে সেই সাথে প্রশাসন ও সরকারকে রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশে আবারো রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে ফায়দা লুটের অপচেষ্টাই ব্যাস্ত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এই সিন্ডিকেট। গেলো বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা, থানায় অগ্নিসংযোগ,লুট,গুলিবর্ষণ ও খুনের পেছনে এদের প্রত্যক্ষ ও সরাসরি ভূমিকা ছিল বলে জানা গেছে।

ছবিঃ সংগৃহীত

সূত্রে বলছে, পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের পটিয়ার সাবেক এমপি ও হুইপ ক্যাসিনো সামশুল হক চৌধুরীর ‘বিশ্বস্ত অর্থের যোগানদাতা’ হিসেবে আবুল কাশেম দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। একইভাবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তার নাম উঠে এসেছে একাধিকবার বিশেষত রাজনৈতিক অর্থায়ন ও নির্দেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।

২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্টে নিউ মার্কেট মোড়,

ইপিজেড,বন্দর, ষোলশহর,২নম্বর গেইট,জিইসি, চকবাজার,কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ, কোতোয়ালি থানা এলাকা, ও পটিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্র-জনতার উপর পরিকল্পিত হামলা ও সহিংসতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আবুল কাশেম ফয়েজুল্লাহ বাহাদুর, মান্না বিশ্বাস, আবু তাহের ও সাদ্দাম। একই ঘটনায় নিহত হন এডভোকেট আলিফ যার হত্যাকাণ্ডের পেছনেও ছিল এ চক্রের অর্থ ও লজিস্টিক সহায়তা। 

ভোমরা স্থল বন্দর থেকে অনলাইনে গোপন মিটিং ও ভারতে পালিয়ে থাকা ক্যাডারদের

নগরীতে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন ও আশ্রয়দানের কাজে সরাসরি জড়িত রয়েছে কাশেম গং। এর পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে জেলহাজতে আটক সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী নুর রশিদ চৌধুরী এজাজ। একাধিক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যদের গোপনে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে চাক্তাইয়ের অন্তত পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।

১)মেসার্স মক্কা বাণিজ্যলয়, ৫৩ নং মধ্যম চাক্তাই, ২)মেসার্স আবুল কাসেম এন্ড সঙ্গ, ৮১ নং মধ্যম চাক্তাই, ৩)মেসার্স চিটাগাং স্টোর, ১১ নং মধ্যম চাক্তাই, ৪)মেসার্স আল মুনিরিয়া ট্রেডার্স, ৩১৭, হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার, ৫)মেসার্স মদিনা ট্রেডিং, ৩৩৬, খাতুনগঞ্জ এছাড়া চরকানাই, পটিয়ার ফোরকানিয়া মাদ্রাসার পাশেই কাশেমের নিজ বাড়ি এখন সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ‘সেফ হাউজ’খ্যাত বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩০ আগস্ট ২০২৪ সালে কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় (মামলা নং-৩১) এজাহারনামীয় আসামি হিসেবে নাম রয়েছে সাবেক মন্ত্রী নওফেল, জহরলাল হাজারী, ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহাদুর, জাহাঙ্গীর আলম, মান্না বিশ্বাস, তানজিরুল হক চৌধুরী, নিজাম উদ্দিন কাজলসহ অন্তত সাতজন প্রভাবশালী নেতার। এদের সাথে আবুল কাশেম গংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রয়েছে একাধিক প্রমান। এই চক্রের একজন, আবুল কাশেম, পটিয়ার ৫নং হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী থেকে মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এবং বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তবে নাম তার বারবারই উঠে আসছে খুন, অগ্নিসংযোগ ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলার নেপথ্য শক্তি হিসেবে।

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদী ছায়ার এমন ঘনঘটা কতদূর বিস্তার লাভ করবে তা সময় বলবে। তবে শহরবাসী প্রশ্ন করছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাণিজ্যের আড়ালে আর কতটা সন্ত্রাসের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেবে কাশেম বাহিনী , উপরে উল্লেখিত দোসরদের সাথে একাধিকবার এই প্রতিবেদন যোগাযোগ করতে চাইলেও কোন রকমে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button