অপরাধএক্সক্লুসিভদেশ

কর কমিশনার কবিরের সম্পদের পাহাড়

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর অঞ্চল-১৩’র কর কমিশনার কবির উদ্দিন মোল্লা চাকুরী জীবনে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। কি নেই তার কাছে, খোদ রাজধানীতেই ৩টি ফ্লাট, বসুন্ধরায় প্লট, দামী গাড়ি, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় কিনেছেন বিপুল সম্পত্তি। চাকুরী জীবনে প্রাপ্ত বেতনের সাথে অস্বাভাবিক তার সম্পদ অর্জনের খতিয়ান। জ্ঞাত আয়ের সাথে মিল না থাকায় এসব সম্পদ অর্জনের প্রক্রিয়াকে অনেকেই অবৈধ উপায় বলে অভিযুক্ত করেন। রাজস্ব ফাকির মামলা থেকে একটি বৃহদাকারের কোম্পানীকে ছাড় দিয়ে তাদের কাছ কোটি কোটি টাকার প্লট হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও শোনা যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কবির উদ্দিন মোল্লা ১৫নভেম্বর-১৯৯৫ সালে ১৫তম ব্যাচে সহকারী কর কমিশনার পদে জাতীয় বাজস্ব বোর্ডে চাকুরীতে যোগদান করেন। প্রায় ৩০বছর চাকুরী করে সরকারের কাছ থেকে সর্ব সাকুল্যে বেতন পেয়েছেন দেড় থেকে ২কোটি টাকা। কিন্তু হিসেব কষলে দেখা যায় তার অর্জিত সম্পদের পরিমান ৩০থেকে ৪০ কোটি টাকা।

গুলশান-১ এর নিকেতন আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৮ নাম্বার রোডের ২০৫/৪ নাম্বার ইনটেক্স নুর মহল ভবনে ১২শ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের সাথে ১২০ বর্গফুটের একটি গাড়ি পার্কিংয়ের জমি রয়েছে কবির উদ্দিন মোল্লার স্ত্রী সাদিয়া আফরোজ মজুমদারের নামে। আর এই সম্পদ কিনতে কবির উদ্দিনকে খরচ করতে হয়েছে ৪কোটি ৭৫ লক্ষ্য টাকা। বনশ্রীর ডি ব্লকের ৩নাম্বার এভিনিউ/রোডের ৪নাম্বার জাহান ভবনে আরো একটি ফ্ল্যাট আছে তাদের নামে। এই ফ্ল্যাটটি কিনেছেন ২০১৯ সালের মে মাসের ২৫ তারিখে। বনশ্রীর এই ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে ৫ কোটি টাকার উপরে। পশ্চিম মালিবাগ চৌধুরী পাড়া এলাকায় ২ এর বি প্রাইম আফিয়া ভবনের ৭ তলায় কবির উদ্দিন মোল্লার নিজের নামেই রয়েছে আলিশান আরো একটি ফ্ল্যাট।

কবির উদ্দিন মোল্লা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চাকুরী করে এতো পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন যে, তিনি তার স্ত্রী সাদিয়ে আফরোজকে বিবাহ বার্ষিকী উপহার হিসেবে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠার একটি প্লট কিনে দিয়েছেন। যার বর্তমান বাজার প্রায় ৭কোটি টাকার উপরে। তবে এই প্লট বসুন্ধরার মামলা ধামাচাপা দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কবির উদ্দিন মোল্লার ছেলে সাদমান সাকিব আমেরিকায় বসবাস করেন। সেখানে ৩০ কোটি টাকা খরচ করে ছেলের জন্য সেকেন্ড হোম গড়ে দিয়েছেন এবং সম্পদ কেনার সকল টাকাই তিনি মতিচোরার আদলে বাংলাদেশ থেকে পাচার করে ছেলের কাছে পাঠিয়েছেন বলে লোকমুখে জানা শোনা যাচেছ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর কমিশনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই উপ-কর কমিশনার পদে থাকাকালীন কবির উদ্দিন মোল্লা বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ ও সাত ব্যক্তিকে আসামি করে রাজস্ব ফাকির একটি মামলাটি করেন। মামলার আসামী ছিলেন বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তাঁর ছেলে সায়েম সোবহান, আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম, তার ছেলে সাদাত সোবহান ও সাফায়েত সোবহান।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপ ২০০৪-০৫ আয়কর বর্ষে ৫কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ১০৯ টাকা, ২০০৫-০৬ কর্বর্ষে ৭ কোট ৭২ লাখ ১৯ হাজার ৮০৩ টাকা এবং ২০০৬-০৭ কর বর্ষে ৮ কোটি ৪৮ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৬ টাকা আয়ের তথ্য রিটার্নে দাখিল করেননি এবং টাকার প্রযোজ্য কর হিসেবে ৮কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৮৩ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন।

পরবর্তিতে কবির উদ্দিন মোল্লা বসুন্ধরার বিরুদ্ধে করা মামলাটি একটি প্লট ঘুষের বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার সমঝোতা করেন এবং ভবিষ্যতে আর কোনোদিন বসুন্ধরাকে কোনো প্রকার মামলায় জড়াবেন না শর্তে আরো ৮কোটি টাকার ঘুষ লেনদেন করেন।
কবির উদ্দিন মোল্লা প্রতি বছরই আমেরিকা, লন্ডন, জাপান, অষ্টেলিয়া, ইউরোপ, ইন্ডিয়া সহ বিশ্বের নামিদামি দেশে কোটি টাকার খরচ করে ভ্রমন করেন। তথ্য সূত্রে জানা যায়, কবির উদ্দিনের ছেলে আমেরিকায় স্যাটেল্ড, সেখানে বাড়ী গাড়ি সবই তার আছে এবং জাপানেও রয়েছে তার বিপুল সম্পদ।

কবির উদ্দিন মোল্লা পরিবারের ভোগ-বিলাশী জীবন ধারন, বিদেশ ভ্রমন, সম্পদের বিবরন ও ব্যাংক ব্যালেন্সের নথি ধরে অনুসন্ধান করলে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের প্রক্রিয়াটি খোলসা হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো।

এব্যাপারে কর কমিশনার কবির উদ্দিন মোল্লার বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button