অপরাধএক্সক্লুসিভপ্রতারনাবাংলাদেশ

হলুদ সাংবাদিকের আতঙ্কে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা,বাপ-বেটা মিলে ২ লাখ টাকার চাদার দাবি,থানায় অভিযোগ

বিশেষ প্রতিবেদন: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কথিত ‘হলুদ সাংবাদিক’ শফিকুল বাশার ও তার ছেলে আরমান হোসেন রাজিবের দৌরাত্ম্যে। একসময় ডাকাতি ও হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি জেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের তথ্য অনুযায়ী, শফিকুল বাশার দীর্ঘদিন ধরেই পেশাদার অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ডাকাতি ও হত্যা মামলার আসামি হয়ে তিনি প্রায় দুই বছর কারাভোগ করেছেন। কারামুক্ত হওয়ার পর তিনি সাংবাদিকতার ছদ্মবেশ নেন। বর্তমানে ‘দৈনিক বর্তমান’ পত্রিকার একটি কার্ড ব্যবহার করে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন এবং সেই প্রভাব খাটিয়েই এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখান।পূর্বেও বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দাবির জন্য গণধোলাইয়ের স্বীকার হয়েছে তারা।মোহাম্মদপুরের ফিউচার হাউজিং এলাকার বাসিন্দা ও ওএমএস ডিলার ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম (ইমন) সম্প্রতি মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

তার অভিযোগ—গত ৭ আগস্ট দুপুরে শফিকুল বাশার ও তার ছেলে মো. রাজিব সরাসরি বসে তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।ইব্রাহিম বলেন,“চাঁদা না দিলে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তারা বলে, আমি যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি আর ব্যবসা করি, তাই আমাকে নিয়মিত তাদের টাকা দিতে হবে। এমনকি তারা বলে—‘আমরা সাংবাদিক, পুলিশ-র‌্যাব-সেনাবাহিনীও আমাদের ভয় পায়, তোকে ব্যবসা করতে দেব না।’”ভুক্তভোগীর দাবি, তার কাছে ওই চাঁদাবাজির ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।অভিযোগে আরও উল্লেখ আছে, শফিকুল বাশার ও রাজিব হুমকি দিয়ে বলেন—যদি টাকা না দেওয়া হয়, তবে তাকে ও তার অফিসারদের বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জেল হাজতে পাঠানো হবে। শুধু তাই নয়, ৯ আগস্ট তারা উল্টো ইব্রাহিমের নামেও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শফিকুল বাশার দীর্ঘদিন ধরে একই কৌশলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখান। ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নীরব থাকতে বাধ্য হন।একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,“সাংবাদিকতার নামে তিনি চাঁদাবাজি করছেন। দুই বছর জেল খেটে এসে এখন নতুনভাবে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে ব্যবসা করছি।”সাংবাদিকতার আদর্শ পেশাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগ নতুন নয়। তবে শফিকুল বাশারের মতো সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যখন ‘সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীর’ পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় চাঁদাবাজি চালান, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়ে।বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংবাদিকতার কার্ড অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন এক ধরনের ‘হলুদ সাংবাদিকতা’, যা শুধু জনগণকেই ভোগান্তিতে ফেলে না, বরং পুরো গণমাধ্যম অঙ্গনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেয়।পত্রিকা হাউস, মানবাধিকার সংস্থা গুলোর উচিৎ যাচাই -বাঁচাই নিয়োগ দেওয়া।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইব্রাহিম থানায় সাধারণ ডায়েরি করে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, “যেকোনো সময় আমাকে বা আমার পরিবারকে হামলা করা হতে পারে।”এ বিষয়ে এখনো মোহাম্মদপুর থানা বা অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা আশা করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনবে।এই ঘটনাটি কেবল একজন ব্যবসায়ীর চাঁদাবাজির অভিযোগ নয়; বরং এটি সাংবাদিকতার নামে অপরাধ ঢাকার একটি ভয়ংকর প্রবণতার উদাহরণ। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা যদি সাংবাদিক পরিচয়ে অবাধে এলাকায় প্রভাব খাটাতে পারে, তবে তা শুধু সমাজেই নয়—গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button