সম্পাদকীয়

রমযানে লাগামহীন অপরাধ

বছরে পবিত্র রমযান হচ্ছে একটি রহমতের মাস। প্রতি বছর রমযান মাসে যেভাবে লাগামহীন অপরাধ চলে তা সারা বছরে চলে না। রমযান শুরুর আগ থেকেই মধ্যবিত্তদের মধ্যে একটি অতংক বিরাজ করে। তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্য কি হারে বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছর দেখা গেল ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরণের পণ্য অবৈধভাবে মজুত করে মূল্য বৃদ্ধি করেছে ও রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। মানুষকে জিম্মি করে এভাবে কোটি টাকা কামানোর সুযোগ রমযান ছাড়া সম্ভব নয়। ভোক্তাদের পকেট কাটার প্রতিযোগিতা শুরু। বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাউ হয়ে গেল। পরের দিন শোনা গেল লিটার প্রতি কতো টাকা বাড়ানো হয়েছে। সকল ধরণের তরকারির দাম এক লাফে তিনগুণ হয়ে গেল। মাছ ও মুরগির দামেও একই অবস্থা। প্রশ্ন জাগে রমযান মাস কি ব্যবসায়ীদেরকে অপকর্ম করার সুযোগ করে দেয়? বাস, ট্রেন ও স্টিমারের টিকেট কালোবাজারে বিক্রির কারণে দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পণ্য পরিবহণের গাড়িগুলো থেকে পথে পথে রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের চাঁদাবাজি চরম আকার ধারণ করে। ডাকাতি ও ছিনতাই  মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। জননিরাপত্তা বলতে কিছুই নেই। সরকারি অফিসগুলোতে ঘুষের পরিমাণ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। প্রতি রমযান মাসে আরেকটি বিষয় দেখা যায়। তা হচ্ছে সেহরির সময় শুরুর সাথে সাথে মোল্লারা মসজিদের মাইক দিয়ে প্রচন্ড শব্দে ডাক চিৎকার শুরু করে দেয়। সেহরির সময় শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত মসজিদের মোল্লারা দীর্ঘ এক ঘন্টা মাইক দিয়ে প্রচন্ড শব্দে ডাকাডাকি ও গান করতে থাকে। ওরা একটু পর পর সেহরির সময় ঘোষণা করতে থাকে, কেউ উচ্চ শব্দে পুরো একটি গান করতে থাকে। মাইকের প্রচন্ড শব্দে এলাকাবাসিদের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে অসুস্থ্য ও শিশুরা আতংকগ্রস্ত হচ্ছে। মোল্লারা মানুষকে জোরপূর্বক চেচামেচি শুনতে বাধ্য করে ও জিম্মি করে। মাইক ও লাউড স্পিকার ব্যবহারের আইন রয়েছে। উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহার করে শব্দ দুষন ও  কারো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ ধর্মের নামে এধরণের বেআইনি কাজের কোন নিয়ন্ত্রন নাই। মাইক দিয়ে মোল্লারা হাকডাক ও প্রচন্ড শব্দ করে সবাইকে ঘুম থেকে জোরপূর্বক উঠতে বাধ্য করে। মাইকের প্রচন্ড শব্দে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা। মোল্লারা একটু পর পর সেহরির সময়  কখন শুরু ও কখন শেষ তা ঘোষণা দিতে থাকে। ওদের কান্ডকারখানা দেখলে মনে হয় রোজাদাররা কেউ সেহরির সময় সম্পর্কে অবগত নয়। সেহরির সময় কখন শুরু ও কখন শেষ তা শুধু মোল্লারাই জানে। বর্তমান তথ্যপ্রজুক্তির যুগে সহেরির সময় কখন শুরু ও কখন শেষ তা সকল রোজাদারই ভালভাবে জানেন। পত্র পত্রিকায় ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সেহরির সময় সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ করা হচ্ছে রমজানের প্রতিদিন। প্রতিটি বাসায় মোবাইল ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখলে রোজাদাররা সময় মত উঠে সেহরি খাইতে পারে। মসজিদের মাইক দিয়ে বিকট শব্দে উশৃঙ্খল মোাল্লাদের হাকডাক, চিৎকার ও গানের কোন প্রয়োজন নাই। মোল্লারা প্রতি রাতে ধর্মের নামে এভাবে বিকট শব্দে মাইক দিয়ে হাকডাক ও চিৎকার করে সুস্থ মানুষদেরকে অসুন্থ্য করে ফেলছে। যেই কাজ মানুষের জন্য ক্ষতি ও বিরক্তির কারণ সেই কাজ ইসলামের অন্তুর্ভূক্ত নয়। এলাকার  লোকরা এই ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে মোল্লারা মারতে আসে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button