দেশরাষ্ট্রনীতিসংগৃহীত সংবাদ

বাবার সম্পত্তি বণ্টন ও নামজারি করার নিয়ম

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা এড়াতে বণ্টননামা দলিল ও নামজারির গুরুত্ব অপরিসীম। জেনে নিন পুরো প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি ভাইবোনদের মধ্যে ভাগাভাগি এবং নিজের নামে রেকর্ডভুক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া। সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেকেই এই পর্যায়ে এসে হয়রানির শিকার হন এবং দীর্ঘমেয়াদী পারিবারিক ও আইনি জটিলতায় পড়েন। এই প্রতিবেদনে আমরা সম্পত্তির বণ্টননামা ও নামজারির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি তুলে ধরব।

প্রথম ধাপ: বণ্টননামা দলিল সম্পাদন

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে যদি একাধিক অংশীদার বা ওয়ারিশ থাকেন, তবে প্রথম কাজ হলো নিজেদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে একটি ‘বণ্টননামা দলিল’ তৈরি ও রেজিস্ট্রি করা। এটি ভবিষ্যতে মালিকানার সীমানা এবং অংশ নিয়ে যেকোনো বিরোধ থেকে সুরক্ষা দেয়।

যেভাবে করবেন বণ্টননামা:

  • পারস্পরিক সম্মতি: প্রথমে সকল ওয়ারিশ মিলে কে কোন অংশ পাবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে।
  • দলিলের খসড়া: একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা দলিল লেখকের সহায়তায় সম্পত্তির তফসিল (পূর্ণাঙ্গ বিবরণ) এবং ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ উল্লেখ করে একটি খসড়া তৈরি করুন।
  • স্ট্যাম্প পেপারে সম্পাদন: নির্ধারিত মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে চূড়ান্ত দলিলটি প্রিন্ট করে সকল অংশীদারকে স্বাক্ষর করতে হবে।
  • দলিল রেজিস্ট্রি: প্রস্তুত করা দলিলটি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে সরকার-নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে রেজিস্ট্রি করতে হবে। এর জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি, স্ট্যাম্প শুল্ক, ই-ফি ইত্যাদি প্রযোজ্য হবে, যা সম্পত্তির মূল্যের ওপর নির্ভর করে।

দ্বিতীয় ধাপ: নামজারি বা মিউটেশন

বণ্টননামা সম্পন্ন হলে বা মালিকানার কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর জমির সরকারি রেকর্ডে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে ‘নামজারি’ বলে। নামজারি না করলে আইনিভাবে আপনার মালিকানা পূর্ণাঙ্গ হয় না এবং জমি বিক্রি বা হস্তান্তরে সমস্যা হয়।

নামজারির আবেদন প্রক্রিয়া:

১. আবেদন দাখিল: সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি (ল্যান্ড) অফিসে সরাসরি অথবা অনলাইনে (land.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে) নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: আবেদনের সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দিতে হয়। যেমন:
* মালিকানার প্রমাণ (বণ্টননামা, ক্রয় দলিল, হেবা দলিল ইত্যাদি)।
* ওয়ারিশান সনদ (উত্তরাধিকার সূত্রে হলে)।
* জমির সর্বশেষ খতিয়ানের কপি (যেমন: আরএস, বিএস)।
* হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনার রশিদ।
* আবেদনকারীর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি।

৩. ফি পরিশোধ: আবেদন ফি ও নোটিশ জারি ফি অনলাইনে বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।

৪. যাচাই ও তদন্ত: ভূমি অফিস থেকে আপনার দেওয়া তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে তহশিলদার বা ভূমি কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত করতে পারেন।

৫. চূড়ান্ত অনুমোদন ও খতিয়ান সংগ্রহ: সবকিছু ঠিক থাকলে এসি (ল্যান্ড) নামজারির অনুমোদন দেবেন। এরপর ডিসিআর ফি পরিশোধ করে আপনি আপনার নামে প্রস্তুতকৃত নতুন খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।

বিশেষ নির্দেশনা: বণ্টননামা ছাড়াই কি নামজারি সম্ভব?

সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্রে জানিয়েছে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড বণ্টননামা দলিল না থাকলেও সকল ওয়ারিশ gemeinsam আবেদন করলে নামজারি করা যাবে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিরোধ, মামলা এবং হয়রানি এড়াতে একটি রেজিস্টার্ড বণ্টননামা করে নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ এবং বুদ্ধিমানের কাজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button