ইসলামকাটি বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল: পদত্যাগী নেতাকে সাধারণ সম্পাদক করায় দলে অস্থিরতা
তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপিতে কমিটি গঠন নিয়ে তীব্র অসন্তোষ, বহিষ্কারের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপিতে নতুন কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। দলের একসময়ের পদত্যাগী নেতা প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ায় তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ, আনিছ দলের দুঃসময়ে পদত্যাগ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন এবং এখন দলের সুসময়ে ফিরে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা অবিলম্বে আনিছকে দল থেকে বহিষ্কারের জোর দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছ ইসলামকাটি ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতির পদসহ দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ‘পারিবারিক ও শারীরিক’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন, যা স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। একই দিনে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র গুহও পদত্যাগ করেছিলেন। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, পদত্যাগের পর আনিছ স্থানীয় ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করেন।
পরিস্থিতি পাল্টে যায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার পালাবদলের পর সুযোগসন্ধানী আনিছুজ্জামান আবারও বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন এবং কৌশলে ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সার্চ কমিটির ৪নং সদস্য হিসেবে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হন। বিষয়টি জানাজানি হলে দলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দলসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১৭ জন সিনিয়র নেতা তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের নির্বাচনী টিম লিডারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, দলের দুর্দিনে যিনি বেইমানি করেছেন, তাকে কোনোভাবেই দলে পুনর্বাসিত করা যাবে না।
এই আবেদনের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি গাজী সুলতান আহমেদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল আলম এবং বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মহিদুজ্জামান (মধু)-সহ আরও অনেকে। কিন্তু সেই আবেদন উপেক্ষা করে সম্প্রতি আনিছুজ্জামানকে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়, যা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও উস্কে দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী সুলতান আহমেদ বলেন, “সার্চ কমিটিতে আনিছের নাম আসার পরেই আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের নিষেধ এবং তার পদত্যাগপত্রের মূল কপি খুঁজে না পাওয়ায় আমরা আর বেশি দূর অগ্রসর হতে পারিনি।”
অন্যদিকে, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হাসান হাদী জানান, আনিছুজ্জামানের পদত্যাগপত্রটি আদৌ গৃহীত হয়েছিল কিনা, সে সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, “তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়া গেলেও তাতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাব ছিল।”
তবে, সকল অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভাষক আনিছুজ্জামান আনিছ বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যা কিছু বলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি দলের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলাম না।”
ইসলামকাটি ইউনিয়ন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দেওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে আনিছের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের আশঙ্কা, আনিছের মতো সুযোগসন্ধানী নেতাদের কারণে দল ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই অবিলম্বে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করার জন্য তারা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।



