বিশ্লেষণসংগৃহীত সংবাদস্বাস্থ্য

অনিদ্রার নেপথ্যে: আমাদের যে ৫টি অভ্যাস দায়ী

অনলাইন ডেস্ক: পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য রাতের গভীর ঘুম অপরিহার্য। কিন্তু আধুনিক দ্রুতগতির জীবনে অনেকেই অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। এর জন্য আমরা পারিপার্শ্বিক নানা কারণকে দায়ী করলেও, অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসই হয়ে ওঠে এর মূল হোতা। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন পাঁচটি অভ্যাস সম্পর্কে, যা আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে।

১. ঘুমানোর আগে ডিজিটাল পর্দার ব্যবহার
রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটের ব্যবহার ঘুমের প্রধান শত্রু। এসব ডিভাইসের পর্দা থেকে নির্গত নীল আলো বা ব্লু লাইট মস্তিষ্কের মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদনে সরাসরি বাধা সৃষ্টি করে। এই হরমোনটি মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করতে সংকেত পাঠায়। এর অভাবে ঘুম আসতে দেরি হওয়া, অস্থিরতা এবং ঘুমের গভীরতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

২. ক্যাফেইন ও উদ্দীপক পানীয় গ্রহণ
দিনের শেষে ক্লান্তি দূর করতে অনেকেই চা বা কফির আশ্রয় নেন। কিন্তু এসব পানীয়তে থাকা ক্যাফেইন নামক উদ্দীপক উপাদানটি স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে তোলে, যা শরীরকে জাগ্রত রাখে। ক্যাফেইনের প্রভাব শরীরে দীর্ঘক্ষণ থাকতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞরা বিকেল বা সন্ধ্যার পর চা, কফি বা এ জাতীয় কোনো পানীয় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।

৩. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা ও শারীরিক পরিশ্রম শরীরকে স্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত করে, যা রাতে সহজে ঘুম আসতে সাহায্য করে। যারা কায়িক পরিশ্রম বা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের শরীর রাতে ঘুমের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে পারে না। তবে মনে রাখতে হবে, ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়, কারণ এটি শরীরের তাপমাত্রা ও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৪. রাতের ভারী খাবার
ঘুমানোর ঠিক আগে গুরুপাক বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেলে তা হজম করতে শরীরকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এর ফলে পেটে অস্বস্তি, গ্যাস বা অম্বলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা আপনার ঘুমের আরামে ব্যাঘাত ঘটায়। একইভাবে, অতিরিক্ত পানি পানের ফলে রাতে বারবার প্রস্রাবের জন্য ঘুম ভেঙে যেতে পারে।

৫. মানসিক উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা
বিছানায় শোবার পর সারাদিনের না পাওয়া, অফিসের চাপ বা ব্যক্তিগত সমস্যার কথা ভাবা অনিদ্রার অন্যতম প্রধান কারণ। দুশ্চিন্তা করলে মস্তিষ্কে কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শরীরকে উত্তেজিত ও সতর্ক রাখে। এর ফলে মস্তিষ্ক শিথিল হতে পারে না এবং ঘুম আসতে বাধাগ্রস্ত হয়।

সুতরাং, নিরবচ্ছিন্ন ও গভীর ঘুমের জন্য আমাদের জীবনযাত্রায় সচেতন পরিবর্তন আনা জরুরি। এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে একটি স্বাস্থ্যকর রুটিন অনুসরণ করলেই আপনি ফিরে পেতে পারেন প্রশান্তির ঘুম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button