ব্যাংককের রাজপথে বিশাল সিঙ্কহোল: কর্তৃপক্ষের তৎপরতা, জনমনে আতঙ্ক
অনলাইন ডেস্ক: থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি ব্যস্ততম রাস্তায় বিশাল আকারের সিঙ্কহোল বা গর্ত তৈরি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। বুধবার সকালে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত ভাজিরা হাসপাতালের সামনে স্যামসেন রোডে প্রায় ৫০ মিটার (১৬৪ ফুট) গভীর এবং ৯০০ বর্গমিটার প্রশস্ত এই বিশাল গর্তটি তৈরি হয়। এর ফলে এলাকার বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনার সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তাটি ধীরে ধীরে দেবে যাচ্ছে এবং এর সাথে বিদ্যুতের খুঁটি ও পানির পাইপলাইন নিচে চলে যাচ্ছে। সড়কের একটি অংশ ধসে পড়ার সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি পেছনের দিকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিটিপুন্ট জানান, এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি, তবে তিনটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশাল এই গর্তটি স্যামসেন পুলিশ স্টেশনের ঠিক সামনে এসে থেমে যায়, যার ফলে স্টেশনটির ভূগর্ভস্থ কাঠামো উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ স্টেশন এবং আশপাশের কয়েকটি আবাসিক ভবন থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সতর্কতা হিসেবে ভাজিরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই দিনের জন্য বহির্বিভাগের (আউটপেশেন্ট) সেবা স্থগিত ঘোষণা করেছে। তবে হাসপাতালের মূল কাঠামো নিরাপদ আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধান
ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিটিপুন্ট প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, সড়কের নিচে চলমান একটি পাতাল রেল স্টেশনের নির্মাণকাজের কারণে এই ধসের ঘটনা ঘটেছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, “পাতাল রেল নির্মাণের সময় মাটি সরে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ভাগ্যক্রমে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”
কর্মকর্তারা বলছেন, একটি পানির পাইপ ফেটে যাওয়ার ফলে পানি চুইয়ে সড়কের নিচের মাটি সরে যায়, যা এই ধসকে ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুম চলায় ভারী বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং দ্রুততার সাথে গর্তটি মেরামতের কাজ শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী আনুতিন জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত সুড়ঙ্গ ও রাস্তা মেরামত করতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগতে পারে।
দুপুরের মধ্যে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা মাটির সরণ আপাতত থামাতে সক্ষম হয়েছে এবং পুরো এলাকা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় ব্যাংককের মতো একটি দ্রুত উন্নয়নশীল শহরের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিগুলো আবারও সামনে চলে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক পরিবহন নেটওয়ার্ক তৈরির পাশাপাশি শহরের ভূতাত্ত্বিক স্থিতিশীলতার দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।



