দোয়া কবুলের সাতটি বিশেষ আমল

হাদিসের আলোকে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত উপায়
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: দোয়া বা প্রার্থনা হলো মুমিনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এর মাধ্যমে বান্দা সরাসরি মহান আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং নিজের আরজি পেশ করে। তবে এমন কিছু বিশেষ মুহূর্ত ও আমল রয়েছে, যখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। হাদিসের আলোকে দোয়া কবুলের এমন সাতটি পরীক্ষিত ক্ষেত্র নিচে তুলে ধরা হলো।
১. ঘুম থেকে জেগে যে দোয়া পাঠ করতে হয়
রাসূলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করলে এবং এরপর আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাইলে তা কবুল করা হয়।
- দোয়াটি হলো:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، رَبِّ اغْفِرْ لِي - অর্থ: “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই; রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসাও তাঁরই; আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহ্র। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়। সুউচ্চ সুমহান আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো উপায় এবং কোনো শক্তি নেই। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন।”
- উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকালাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শায়ইন ক্বদীর। সুবহা-নাল্লাহি, ওয়ালহামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম, রব্বিগফিরলী।
(সূত্র: বুখারী, ফাতহুল বারী, ৩/৩৯)
২. হযরত ইউনুস (আ.)-এর দোয়া
হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থাকা অবস্থায় যে দোয়া পাঠ করে মুক্তি লাভ করেছিলেন, সেই দোয়া পাঠ করে কোনো কিছু চাইলে আল্লাহ তা কবুল করেন।
- দোয়াটি হলো:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ - অর্থ: “আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র-মহান, নিশ্চয় আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”
- উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায-যালিমীন।
(সূত্র: তিরমিযী, ৫/৫২৯)
৩. ইসমে আ’যম পাঠের পর প্রার্থনা
হাদিসে ইসমে আ’যম (আল্লাহর মহান নাম) সম্বলিত একটি দোয়াকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই দোয়া পাঠের পর আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তাই কবুল করা হয়।
- দোয়াটি হলো:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَحْدَكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ، الْمَنَّانُ، يَا بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ - অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাই; কারণ, সকল প্রশংসা আপনার, কেবলমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আপনার কোনো শরীক নেই, সীমাহীন অনুগ্রহকারী; হে আসমানসমূহ ও যমীনের অভিনব স্রষ্টা! হে মহিমাময় ও মহানুভব! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী-সর্বসত্তার ধারক! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।”
(সূত্র: সুনান গ্রন্থসমূহ, যেমন- আবূ দাউদ, ১৪৯৫)
৪. বিপদের মুহূর্তে পঠিতব্য দোয়া
যেকোনো বিপদে পতিত হয়ে পূর্ণ বিশ্বাস ও ধৈর্যের সাথে এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তার বিপদ দূর করে দেন এবং উত্তম প্রতিদান দেন।
- দোয়াটি হলো:
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا - অর্থ: “আমরা তো আল্লাহ্রই এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন।”
- উচ্চারণ: ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলিফ লী খইরম মিনহা।
(সূত্র: মুসলিম, ২/৬৩২)
আরও যে তিন ক্ষেত্রে দোয়া কবুল হয়
উপরোক্ত চারটি বিশেষ দোয়া ছাড়াও আরও তিনটি আমলের পর দোয়া কবুলের কথা বর্ণিত হয়েছে:
- ৫. আল্লাহর জিকিরের পর: যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে ও বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করে, তার পরবর্তী দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।
- ৬. কুরআন তিলাওয়াতের পর: পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত শেষে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
- ৭. জমজমের পানি পান করার সময়: জমজমের পানি পান করার সময় কোনো নেক নিয়ত বা দোয়া করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন।
এই আমলগুলো মুমিনের জন্য আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।



