ইসলাম ধর্ম

আল্লাহর জিম্মায় তিন ব্যক্তি: যে আমলে মেলে বিশেষ ঐশী নিরাপত্তা

ইসলামিক ডেস্ক: ইসলামে এমন কিছু বিশেষ আমলের বর্ণনা রয়েছে, যা পালনকারীকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজের নিরাপত্তায় নিয়ে নেন। শুধু পার্থিব জীবনেই নয়, মৃত্যুর পরেও তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কারের ঘোষণা। সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, নির্দিষ্ট তিনটি কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তি আল্লাহর বিশেষ জিম্মা বা হেফাজত লাভ করেন।

আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত এক সহিহ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তিন ব্যক্তির প্রত্যেকের জিম্মাদারী আল্লাহর উপর। তারা বেঁচে থাকলে আল্লাহ তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের জন্য যথেষ্ট হন। আর যদি তারা মৃত্যুবরণ করে, তবে আল্লাহ তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (হাদিস নং ১৪১)

হাদিসের আলোকে সেই তিন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হলেন:

১. যে ব্যক্তি নিজ বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করে: গৃহে প্রবেশের সময় সালামের প্রচলনকারী ব্যক্তি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকেন।
২. যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশ্যে গমন করে: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজের উদ্দেশ্যে যিনি মসজিদের দিকে যাত্রা করেন, তিনি আল্লাহর জিম্মায় চলে যান।
৩. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে বের হয়: আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে যিনি আল্লাহর পথে বের হন, তিনিও মহান রবের হেফাজতে থাকেন।

আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক নির্বাচিত কিছু জিকির ও দোয়া

উপরোক্ত আমলগুলোর পাশাপাশি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে বান্দা প্রভুর নৈকট্য অর্জন করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিকির ও দোয়া উল্লেখ করা হলো, যা মুমিনের দৈনন্দিন জীবনের পাথেয় হতে পারে।

১. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসা:

  • উচ্চারণ: “আল্লহু আকবার কাবীরা- ওয়াল হামদুলিল্লা-হি কাসীরা- ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুকরাতান ওয়া আসীলা।”
  • অর্থ: আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, অফুরন্ত প্রশংসা। আর সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁরই পবিত্রতা বর্ণনা করি। (সহিহ মুসলিম: ১২৪৫)

২. তাওহিদের শ্রেষ্ঠ ঘোষণা:

  • উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।”
  • অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

৩. আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার বিশেষ জিকির:

  • উচ্চারণ: “সুবহানাল্লাহি আদাদা খালকিহি, সুবহানাল্লাহি রিদা নাফসিহি, সুবহানাল্লাহি যিনাতা আরশিহি, সুবহানাল্লাহি মিদাদা কালিমাতিহি।”
  • অর্থ: আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর সৃষ্টি সংখ্যার সমান, তাঁর সন্তুষ্টি মোতাবেক, তাঁর আরশের ওজনের সমপরিমাণ এবং তাঁর বাণীসমূহের সমপরিমাণ। (ইবনে মাজাহ: ৩৮০৮)

৪. দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া (দুআ ইউনুস):

  • উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।”
  • অর্থ: (হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।

৫. শিরক থেকে আশ্রয় প্রার্থনার দোয়া:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ’জুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লামু, ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা- লা- আ’লামু।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজানা অবস্থায় শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (মুসনাদে আহমাদ)

৬. হেদায়েত, তাকওয়া ও সচ্ছলতার জন্য দোয়া:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্ তুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, চরিত্রের নির্মলতা ও আত্মনির্ভরশীলতা প্রার্থনা করি। (জামে’ আত-তিরমিজি: ৩৪৮৯)

৭. দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনার দোয়া:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আ-তিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আযাবান্ না-র।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। (সহিহ মুসলিম: ৬৭৩৩)

৮. আল্লাহর স্মরণে সাহায্য প্রার্থনার দোয়া:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন।

৯. সার্বিক দুশ্চিন্তা, অক্ষমতা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ্ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাবতীয় চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কাপুরুষতা ও কৃপণতা থেকে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের আধিপত্য থেকে।

১০. সকলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ালিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে, সকল মুমিন পুরুষ ও নারীকে এবং সকল মুসলিম পুরুষ ও নারীকে ক্ষমা করে দিন।

১১. নবী (সা.)-এর উপর দরুদ:

  • উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা।”
  • অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর পরিবারের উপর সালাত ও পরিপূর্ণ সালাম বর্ষণ করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button