অপরাধএক্সক্লুসিভকুমিল্লাপ্রশাসনবাংলাদেশসংগৃহীত সংবাদ

কুমিল্লায় সেনা অভিযানে মাদক সম্রাটের আস্তানা ফাঁস, পালিয়েও রক্ষা পায়নি দুই ভাই

কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লা নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে পর্দার আড়ালে থাকা আলোচিত মাদক কারবারি আবুল কাশেম ওরফে ‘ফেন্সি কাশেম’-এর মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। গত সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) রাতে নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকায় তার বাড়িতে সেনাবাহিনীর আকস্মিক অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানের আগেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় কাশেম ও তার বড় ভাই নজির আহাম্মেদ।

সেনাবাহিনীর সূত্রমতে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুমিল্লা আদর্শ সদর আর্মি ক্যাম্পের একটি দল রাত আনুমানিক ৮টার দিকে দক্ষিণ চর্থার ধোপা বাড়ি এলাকার ওই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। সেনা সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়েই অভিযুক্ত আবুল কাশেম ওরফে ‘ডাইল কাশেম’ এবং তার ভাই নজির আহাম্মেদ বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা ওই এলাকার মৃত শফিক মিয়ার ছেলে।

অভিযান শেষে ওই বাড়ি থেকে ১,০৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং মাদক বিক্রির ২৩ হাজার ৩৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত মাদক ও নগদ অর্থ কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে (মামলা নং-৭৭, তারিখ: ২৪/০৯/২০২৫), যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ৩৬(১) ধারার ১০(ক) উপধারায় রুজু করা হয়েছে।

যেভাবে গড়ে ওঠে কাশেমের অপরাধ জগৎ

স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, কাশেম বছরের পর বছর ধরে কুমিল্লায় একটি শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছে। সাবেক এক যুবলীগ নেতার ছত্রছায়ায় তিনি চর্থাসহ আশেপাশের এলাকায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন। শুধু কুমিল্লাতেই নয়, ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে সুকৌশলে মাদক সরবরাহ করত তার সিন্ডিকেট। কাশেমের একটি নারী নেটওয়ার্কও রয়েছে, যারা এনজিও কর্মীর পরিচয়ে অভিনব কৌশলে মাদক বিক্রি ও সরবরাহ করত বলে অভিযোগ রয়েছে।

মাদক ব্যবসার মাধ্যমে কাশেম বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। কুমিল্লা শহরের রাজগঞ্জ বাজারে তার প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের চারটি দোকান রয়েছে বলে জানা যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকের ওপর হামলা

কাশেমের অপরাধের জাল শুধু মাদক ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অতীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরাও তার আক্রোশের শিকার হয়েছেন।

একটি ঘটনায় জানা যায়, কয়েক বছর আগে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মজনু মিয়া তাকে মাদকসহ হাতেনাতে আটক করলেও এখতিয়ারের জটিলতায় ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে কাশেম উল্টো ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দায়ের করে। এই মামলার কারণে এসআই মজনু মিয়ার পদোন্নতি ছয় বছর আটকে ছিল। পরে কাশেম তার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মামলাটি আপোষ করে। এই মামলার কাগজপত্র দেখিয়ে কাশেম পরবর্তীতে অন্য পুলিশ সদস্যদেরও ভয়ভীতি দেখাত বলে অভিযোগ রয়েছে।

শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগও রয়েছে কাশেমের বিরুদ্ধে।

অবশেষে সেনাবাহিনীর এই অভিযানের মাধ্যমে কাশেম পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার দীর্ঘদিনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button