অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিপ্রতারনাবাংলাদেশবিশ্লেষণমিডিয়া

ভূমি দখল থেকে হত্যা মামলা: নড়াইলের তুষারের বিরুদ্ধে প্রতারণার পাহাড়

নিজস্ব পড়োটীবেডোক: নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার যোগানিয়া গ্রামে তুষার কান্তি সিকদার নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভূমি দখল, জালিয়াতি এবং কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের মতে, তিনি শুধু একজন সাধারণ প্রতারকই নন, আলোচিত মামুন হত্যা মামলারও অন্যতম আসামি। তার একের পর এক কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সাম্প্রতিক একটি ঘটনায় তুষারের ভূমি দখলের বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা এমপি মামলা নং ২৬৭/২০২৫-এ বাদী পলাশ কুমার সিকদার অভিযোগ করেন, যোগানিয়া মৌজার ১৪২১ দাগের ২৮ শতক জমি তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে ভোগদখল ও চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু তুষার কান্তি সিকদার সম্প্রতি সেই জমির একাংশ জোরপূর্বক দখলের উদ্দেশ্যে একটি টিনের ছাপড়া নির্মাণের চেষ্টা করেন। আদালতের নির্দেশে পরিচালিত তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায়, আদালত বাদীর পক্ষে রায় দেন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তুষারের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করেন।

তবে তুষারের প্রতারণার জাল শুধু এই একটি ঘটনাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে জমি বিক্রির নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের তালিকাও বেশ দীর্ঘ:

  • কল্পনা রানী বসু: ১৩ শতক জমির সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করেও তিনি দলিলের মুখ দেখেননি।
  • পান্নু হুজুর: তিন কিস্তিতে টাকা দিয়েও ২৫ শতক জমির মালিকানা পাননি।
  • ভোলা নন্দী: তার জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করে সেই জমি তুষার অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
  • সাবেক চেয়ারম্যান: বাঐসোনা ইউনিয়নের সাবেক কুটি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েও জমি বুঝিয়ে দেননি। উল্টো একই জমি দেখিয়ে অন্য আরেকজনের কাছ থেকেও টাকা নেন।
  • বাবলু ঠাকুর ও সুবোধ মজুমদার: তাদের জমি বন্ধক রেখে টাকা নিলেও তা আর ফেরত দেননি।
  • রেজওয়ান মাস্টার: ২২ শতক জমির জন্য ৩ লাখ টাকা দিয়েও দলিল পাননি।
  • জয়দেব দাস: বাজারের দুটি ঘরের জন্য তুষারকে টাকা দিয়েছিলেন জয়দেব। কিন্তু ঘর না পেয়ে সেই শোকেই তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, তুষার কান্তি সিকদার মামুন হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়েও তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি এখনও অবিবাহিত এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। তার অর্থনৈতিক দাপট এবং ভূমি দালালি চক্রের কারণে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের দাবি, তুষার কান্তি সিকদারের মতো একজন চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও হত্যা মামলার আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোটা সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। তার প্রতারণার নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তারা প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button