Uncategorizedসংগৃহীত সংবাদ

অবনতির পথে সমাজ: চিনে নিন ১২টি লক্ষণে

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সমাজ কখন তার অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়? এর লক্ষণগুলো কী কী? সমাজবিজ্ঞানীরা নানা সময়ে এর বিভিন্ন নির্দেশকের কথা বলেছেন। সমাজ তখনই ব্যর্থ হিসেবে পরিগণিত হয়, যখন তার আদর্শ, লক্ষ্য ও মূল্যবোধের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। সামষ্টিক জীবনের এই অধঃপতনের কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ রয়েছে যা দেখে একটি ব্যর্থ সমাজকে সহজেই চিহ্নিত করা যায়।

১. হুজুগে মাতামাতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনীহা:
ব্যর্থ সমাজে মানুষ জ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানমনস্কতার পরিবর্তে হুজুগে মেতে ওঠে। এখানে বই পড়া, মুক্তচিন্তা কিংবা বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনার চেয়ে সাময়িক ও ভিত্তিহীন বিষয়ে মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। পাঠাগারগুলো শূন্য পড়ে থাকে, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বা চটকদার বিষয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে।

২. সস্তা বিনোদনের জয়জয়কার:
যে সমাজে রুচিশীল ও শিক্ষণীয় বিনোদনের কদর থাকে না, সেখানে অর্থহীন ও সস্তা বিনোদন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্য দিয়ে এক শ্রেণির মানুষ খুব সহজেই তারকাখ্যাতি অর্জন করে এবং জনমনে গভীর প্রভাব ফেলে।

৩. দুর্নীতিবাজদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ:
ব্যর্থ সমাজে দুর্নীতিকে ‘সফলতা’ হিসেবে দেখা হয়। সেখানে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা সমাজের চোখে রোল মডেল বা অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। তাদের বিত্তবৈভব ও ক্ষমতা দেখে সাধারণ মানুষও সেই পথকেই সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করতে শুরু করে।

৪. অযোগ্যদের হাতে ভাগ্য নির্ধারণের ভার:
যেখানে শিক্ষা ও যোগ্যতার চেয়ে অর্থ ও ক্ষমতার দাপট বেশি, সেখানে অশিক্ষিত এবং অযোগ্যরাই সমাজের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্বে চলে আসে। ফলে, শিক্ষিত ও জ্ঞানীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন এবং সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

৫. চিন্তাশীলদের বিপরীতে মূর্খের আস্ফালন:
একটি অধঃপতিত সমাজে প্রত্যেক চিন্তাশীল ও সচেতন ব্যক্তির বিপরীতে হাজারো মূর্খ অবস্থান নেয়।এখানে গঠনমূলক আলোচনার পরিবর্তে চিৎকারের জোর বেশি থাকে এবং পচনশীল শব্দের আঘাতে সচেতন কণ্ঠস্বর হারিয়ে যায়।

৬. উদ্যোক্তার চেয়ে চাকরিজীবীর কদর বেশি:
ব্যর্থ সমাজে ঝুঁকি নিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি করার মানসিকতা কমে যায়। মানুষ উদ্যোক্তা হওয়ার চেয়ে একটি নিরাপদ চাকরিকেই জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য হিসেবে ধরে নেয়। ফলে, সমাজে নতুন উদ্যোগ ও কর্মসংস্থান তৈরির পথ সংকুচিত হয়ে আসে।

৭. চিন্তাশীল ও সত্যবাদীর প্রতি অবহেলা:
যে সমাজে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা হয় না এবং কঠিন সত্য তুলে ধরার কারণে তাদের তিরস্কৃত হতে হয়, সেই সমাজ ব্যর্থ হতে বাধ্য। এমন সমাজ সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করতে পারে না এবং বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে চলে।

৮. লক্ষ্যহীন তরুণ প্রজন্ম:
ব্যর্থ সমাজে তরুণদের সামনে কোনো মহৎ আদর্শ বা লক্ষ্য থাকে না।তারা স্বল্প সময়ে ও সহজ পথে ধনী হওয়ার জন্য যেকোনো পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না, যা তাদের নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দেয়।

৯. নির্বোধ সংখ্যাগরিষ্ঠের দাপট:
যেখানে সমাজের বেশিরভাগ মানুষ তুচ্ছ ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনায় মগ্ন থাকে, সেখানে মূল এবং গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো আড়ালে চলে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠের এই নির্বুদ্ধিতা সমাজকে সঠিক পথে অগ্রসর হতে বাধা দেয়।

১০. অর্থহীন তত্ত্বে মোহাবিষ্ট জনতা:
ব্যর্থ সমাজে মানুষকে নানা অর্থহীন তত্ত্ব ও ভাবনার মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। এর ফলে তারা বাস্তব সমস্যাগুলো অনুধাবন করতে পারে না এবং সৃষ্টিশীল ও গঠনমূলক কাজে মনোযোগ দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

১১. ‘সবজান্তা’ মনোভাবের বিস্তার:
যে সমাজে প্রতিটি বিষয়ে মতামত দেওয়ার মতো ‘বিশেষজ্ঞ’র অভাব হয় না, সেখানে জ্ঞানের গভীরতা কমে যায়। সবাই নিজেকে সবজান্তা মনে করে এবং কোনো বিষয়ে গভীর অধ্যয়ন ছাড়াই মতামত দিয়ে থাকে।

১২. সমস্যার গভীরে না গিয়ে দোষারোপের সংস্কৃতি:
ব্যর্থ সমাজে মানুষ সমস্যার মূল কারণ অনুসন্ধানের চেয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপাতে বেশি ব্যস্ত থাকে। তারা সমস্যার উপরিভাগে ভেসে বেড়ায়, কিন্তু এর গভীরে গিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button