থাইরয়েড: অদৃশ্য উপসর্গ ও সামাজিক সচেতনতার গুরুত্ব

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা এমন একটি ‘অদৃশ্য অসুস্থতা’, যা বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রাকে ভেতর থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি এই সমস্যায় ভুক্তভোগীদের প্রতি পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা এবং সহানুভূতি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
থাইরয়েডের প্রকারভেদ ও প্রধান লক্ষণসমূহ
থাইরয়েডের সমস্যা প্রধানত দুই প্রকারের হয়ে থাকে: হাইপোথাইরয়েডিজম (যেখানে থাইরয়েড হরমোন প্রয়োজনের চেয়ে কম উৎপন্ন হয়) এবং হাইপারথাইরয়েডিজম (যেখানে হরমোন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়)। উভয় ক্ষেত্রেই রোগীর শারীরিক ও মানসিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এর কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো:
- মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন: ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন (মুড সুইং), হঠাৎ রেগে যাওয়া, বিষণ্ণতা এবং কোনো কিছুতেই আনন্দ খুঁজে না পাওয়া।
- শারীরিক উপসর্গ: শরীরে ক্লান্তিভাব থাকা সত্ত্বেও ঘুমের সমস্যা, মাথা ঘোরা, হাত-পা কাঁপা, চোখে ঝাপসা দেখা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আকস্মিক ব্যথা অনুভব করা।
- অন্যান্য পরিবর্তন: ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, অতিরিক্ত চুল পড়া এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া। অনেক সময় এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ সমস্যা ভেবে ভুল করা হয়।
- জ্ঞানীয় সমস্যা: মনোযোগ কমে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া এবং কোনো কিছু সহজে ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
সামাজিক ভুল ধারণা: রোগীর নীরব সংগ্রাম
থাইরয়েডের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর উপসর্গগুলো বাইরে থেকে সহজে দৃশ্যমান নয়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রায়শই সামাজিক এবং পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির শিকার হতে হয়। ভুক্তভোগীর অবস্থাকে “অলসতা”, “অজুহাত” বা “ইচ্ছাকৃত আচরণ” বলে মনে করেন।
বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে শরীরের বিপাকক্রিয়া (Metabolism) ধীর হয়ে যায়, ঘুমের চক্র ব্যাহত হয় এবং মানসিক শক্তি কমে আসে। একারণে “কম খাও, বেশি হাঁটো” – এর মতো সাধারণ পরামর্শ এক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। রোগীকে প্রতিদিন নিজের শরীরের বিরুদ্ধে এক কঠিন লড়াই করে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হয়, যা ا উপলব্ধি করতে পারেন না।
সচেতনতা ও পারিবারিক সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে থাইরয়েড রোগীর পরিবারের জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে আমাদের সমাজে রোগীর মানসিক অবসাদ বা মেজাজ পরিবর্তনকে প্রায়শই ‘অজুহাত’ বা ‘ঢং’ বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়, যা রোগীর অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
সুতরাং, এই নীরব যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই করা মানুষটির জন্য সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা এবং সহানুভূতি অত্যন্ত জরুরি। রোগীর আশেপাশের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং পরিবারের সদস্যদের বুঝতে হবে যে এটি একটি হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতার ফল, কোনো ইচ্ছাকৃত আচরণ নয়। সঠিক জ্ঞান ও সহমর্মিতাই পারে থাইরয়েড রোগীর জীবনযাত্রাকে সহজ ও স্বাভাবিক করে তুলতে।



