ইসলাম ধর্ম

ইসলামে অতিথি আপ্যায়নের গুরুত্ব: বরকত ও রহমতের মাধ্যম

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে অতিথি আপ্যায়নকে কেবল একটি সামাজিক সৌজন্যতা হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটি ইবাদতের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের এক বিশেষ মাধ্যম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবন ও হাদিসে অতিথিকে সম্মান জানানোর বিষয়ে এমন সব নির্দেশনা পাওয়া যায়, যা এর গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরে।

নবীজির (ﷺ) শিক্ষায় এক নারীর উপলব্ধি

এ প্রসঙ্গে একটি বহুল বর্ণিত ঘটনা রয়েছে। একবার একজন নারী সাহাবি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে এসে তার স্বামীর বিরুদ্ধে কিছুটা অভিযোগের সুরে বলেন যে, তার স্বামী প্রায়শই প্রচুর অতিথি আমন্ত্রণ করেন এবং তাদের জন্য ক্রমাগত খাবার প্রস্তুত ও আপ্যায়ন করতে গিয়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকলেন এবং সেই নারী ফিরে গেলেন।

এর কিছুক্ষণ পরেই, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই নারীর স্বামীকে ডেকে পাঠান এবং বলেন, “আজ আমি তোমার ঘরে অতিথি হবো।” এই সংবাদে সেই ব্যক্তি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বাড়ি ফেরেন এবং তার স্ত্রীকে জানান যে, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আজ তাদের অতিথি। একথা শুনে স্ত্রীর সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায় এবং তিনি পরম আনন্দ ও যত্নের সঙ্গে घरात যা ছিল, তা দিয়েই সর্বোত্তম খাবার প্রস্তুত করেন।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করার পর বিদায় নেওয়ার সময় গৃহকর্তাকে বলেন, “তোমার স্ত্রীকে বলো, সে যেন আমি যে দরজা দিয়ে বের হচ্ছি, সেদিকে তাকিয়ে থাকে।”

সেই নারী দরজার দিকে তাকিয়ে এক আশ্চর্যজনক দৃশ্য দেখতে পান। তিনি দেখেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পেছন পেছন ঘর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত প্রাণী, বিচ্ছু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গও বেরিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহর এই কুদরত দেখে তিনি বিস্মিত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

জ্ঞান ফেরার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “যখনই কোনো অতিথি তোমার ঘর থেকে বিদায় নেয়, তখন এমনই ঘটে। তার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তোমার ঘর থেকে সমস্ত বিপদ, পরীক্ষা এবং অমঙ্গল দূর হয়ে যায়। অতিথির আপ্যায়নের কষ্টের পেছনে এটাই হলো আল্লাহর প্রজ্ঞা ও পুরস্কার।”

অতিথি আপ্যায়ন সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা

অতিথিকে সম্মান জানানোর গুরুত্ব বোঝাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরও বলেছেন:

  • “যে ঘরে বেশি অতিথি আসে, আল্লাহ সেই ঘরকে ভালোবাসেন। এমন ঘরের চেয়ে উত্তম আর কিছুই হতে পারে না, যেখানে তরুণ ও বৃদ্ধ সবার জন্য দরজা সর্বদা খোলা থাকে। এমন ঘরে আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হয়।”
  • রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “যখন আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের কল্যাণ চান, তখন তিনি তাদের জন্য একটি উপহার পাঠান।” সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, “কী সেই উপহার, হে আল্লাহর রাসূল?” তিনি উত্তর দিলেন, “অতিথি। সে তার নিজের রিজিক (বরাদ্দকৃত জীবিকা) নিয়ে আসে এবং যাওয়ার সময় গৃহের লোকদের পাপ সঙ্গে করে নিয়ে যায়।”

সুতরাং, ইসলামে অতিথিকে কেবল একজন সাধারণ আগন্তুক হিসেবে দেখা হয় না, বরং তাকে জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম এবং আল্লাহর রহমতের বাহক হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই আমলটিকে ঈমানের সঙ্গে যুক্ত করে বলেছেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন অবশ্যই তার অতিথির প্রতি উদার হয়।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৫৬০)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button