ইসলাম ধর্ম

সারা জীবনের কাযা নামাজ: আদায় করার পদ্ধতি ও করণীয়

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: জীবনের কোনো পর্যায়ে অবহেলা বা অপারগতার কারণে ফরজ নামাজ ছুটে যাওয়া মুসলিমদের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তবে ইসলামে এর প্রতিকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। উম্মতের সকল মুজতাহিদ ইমাম এ বিষয়ে একমত (ইজমা) যে, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত—যেকোনো কারণেই ফরজ নামাজ ছুটে গেলে পরবর্তীতে অবশ্যই তার কাযা আদায় করতে হবে।

প্রথম পদক্ষেপ: তওবা ও দৃঢ় সংকল্প

যে ব্যক্তির জীবনে বহু নামাজ কাযা হয়ে গেছে, তার প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো এই গুরুতর অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা (তওবা)। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে আর কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, শুধু তওবা করলেই ছুটে যাওয়া নামাজের দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না; বরং সেই নামাজগুলো কাযা হিসেবে আদায় করাও ওয়াজিব।

কিভাবে কাযা নামাজের হিসাব করবেন?

  • কোন নামাজের কাযা: বালেগ হওয়ার পর থেকে যে নামাজগুলো কাযা হয়েছে, তার মধ্যে কেবল ফরজ ও বিতর নামাজের হিসাব করতে হবে। সুন্নত নামাজের কাযা আদায় করতে হয় না।
  • সংখ্যা নির্ধারণ: যদি কাযা নামাজের সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে জানা থাকে, তবে সে অনুযায়ী আদায় করতে হবে। আর যদি সংখ্যা জানা না থাকে, তবে প্রবল ধারণা অনুযায়ী একটি আনুমানিক হিসাব করতে হবে। এক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে অনুমানের চেয়ে কিছুটা বেশি সংখ্যা নির্ধারণ করে তা লিখে রাখা উত্তম। নারীরা তাদের মাসিক (হায়েজ) ও প্রসব পরবর্তী (নেফাস) দিনগুলো বাদ দিয়ে হিসাব করবেন।

কাযা আদায়ের নিয়ম ও নিয়ত

কাযা নামাজ আদায়ের জন্য নিয়ত করা আবশ্যক।

  • নির্দিষ্ট নিয়ত: যদি কাযা নামাজের দিন-তারিখ জানা থাকে, তবে সেভাবেই নিয়ত করতে হবে। যেমন: “আমি অমুক দিনের ফজরের কাযা নামাজ আদায় করছি।”
  • সাধারণ নিয়ত: যদি দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করা কঠিন হয়, তবে এভাবে নিয়ত করা যায়: “আমার জীবনের ছুটে যাওয়া প্রথম ফজরের কাযা আদায় করছি” বা “আমার দায়িত্বে থাকা শেষ যোহরের কাযা আদায় করছি।” প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য একইভাবে নিয়ত করতে হবে।

সহজ পদ্ধতিতে কাযা আদায়

নফল নামাজের চেয়ে কাযা নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই নফল ইবাদতের সময়টিতে কাযা নামাজ আদায় করা উত্তম। কাযা আদায়ের একটি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো, প্রত্যেক ওয়াক্তের ফরজ নামাজের সাথে সেই ওয়াক্তের একটি করে কাযা নামাজ আদায় করে নেওয়া। যেমন:

  • ফজরের ফরজ নামাজের পর এক ওয়াক্ত ফজরের কাযা।
  • যোহরের ফরজ নামাজের পর এক ওয়াক্ত যোহরের কাযা।

এভাবে নিয়মিত আদায় করলে এবং একটি তালিকা থেকে আদায়কৃত নামাজের হিসাব কেটে দিলে, এক বছরে এক বছরের কাযা নামাজ সহজেই আদায় করা সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।

কাযা নামাজ আদায়ের নিষিদ্ধ সময়

তিনটি মাকরুহ বা নিষিদ্ধ সময় ছাড়া দিনের যেকোনো সময় কাযা নামাজ আদায় করা যায়। সময়গুলো হলো:
১. সূর্যোদয়ের সময়: সূর্য ওঠা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত।
২. দ্বিপ্রহরের সময়: সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর থাকে, তখন (প্রায় ৫-৭ মিনিট)।
৩. সূর্যাস্তের সময়: সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করার পর থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।

এই তিন সময় ব্যতীত অন্য যেকোনো সময় কাযা নামাজ আদায় করা জায়েজ।

(সূত্র: দুররে মুখতার ২/৭৬, ফাতাওয়া শামী ২/৭৬, বিন নূরী টাউন ওয়েবসাইট)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button