ইসলাম ধর্ম

মিথ্যার ভয়াবহ পরিণতি: হাদিসের আলোকে কঠোর সতর্কতা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: সত্যবাদিতা মানব চরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। ইসলামে সত্যবাদিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং মিথ্যাকে সব পাপের উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করে কঠোরভাবে বর্জন করতে বলা হয়েছে। ছোট-বড় যেকোনো ধরনের মিথ্যাই ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মিথ্যাবাদীর জন্য পরকালে ভয়াবহ শাস্তির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একাধিক হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

সত্য ও মিথ্যার চূড়ান্ত গন্তব্য

মিথ্যা মানুষকে পাপাচারের দিকে ঠেলে দেয়, যার শেষ পরিণতি জাহান্নাম। অন্যদিকে, সততা মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“তোমরা মিথ্যাচার বর্জন করো। কেননা মিথ্যা পাপাচারের দিকে ধাবিত করে এবং পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলতে থাকলে এবং মিথ্যাচারকে স্বভাবে পরিণত করলে শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যুক হিসেবেই লেখা হয়। আর তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। আর কোনো ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর নিকটে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৮৯]

রসিকতার ছলে মিথ্যা বলাও ধ্বংসের কারণ

অনেক সময় মানুষ অন্যকে হাসানোর জন্য বা মজলিস জমানোর জন্য রসিকতার ছলে মিথ্যা বলে থাকে। ইসলামে এটিও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এর পরিণতি ধ্বংস। বাহয ইবনে হাকিম (রা.) তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন:

“মানুষকে হাসানোর জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯০]

শিশুদের সাথে তুচ্ছ বিষয়েও মিথ্যা নয়

অনেক অভিভাবক শিশুদের শান্ত করার জন্য বা তাদের কাছ থেকে কোনো কাজ আদায়ের জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। এটিও ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ হিসেবে গণ্য। আব্দুল্লাহ ইবনে আমীর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

“একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ঘরে বসা অবস্থায় আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এই যে, এসো! তোমাকে দিবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে প্রশ্ন করলেনঃ তাকে কি দেয়ার ইচ্ছা করেছো? তিনি বললেন, খেজুর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে তাহলে এ কারণে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যার পাপ লিপিবদ্ধ হতো।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯১]

যাচাই ছাড়া কথা বলাই মিথ্যাবাদীর লক্ষণ

বর্তমান সময়ে কোনো কথা বা তথ্য পেলেই তা যাচাই না করে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। ইসলামে এটিকেও মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবূ হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন:

“কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোনো কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়।” [সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২]

সুতরাং, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সব ধরনের মিথ্যাকে বর্জন করে সততাকে ধারণ করাই একজন মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button