কবরের সাপ এবং সন্তানের তওবা: এক অলৌকিক ঘটনার শিক্ষা
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: এক বাবার দাফনকার্য ঘিরে ঘটে গেল এক বিস্ময়কর ও শিক্ষণীয় ঘটনা, যা উপস্থিত জনতাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। দাফনের সময় কবরে এক অলৌকিক সাপের আবির্ভাব এবং অবশেষে সন্তানের আন্তরিক তওবা তওবার মাধ্যমে তার অন্তর্ধান—এই ঘটনাটি সন্তানের কর্মফল কীভাবে পরকালে পিতামাতার ওপর প্রভাব ফেলে, সেই মহাসত্যকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
দাফনকার্যে অলৌকিক বাধা
ঘটনার সূত্রপাত, যখন একমাত্র পুত্র তার প্রয়াত পিতাকে কবরে নামাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে কবরের এক পাশ থেকে একটি সাপ ফণা তুলে আবির্ভূত হয়। আকস্মিক এই দৃশ্যে উপস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দাফনকার্য থেমে যায়। এরপর বারবার চেষ্টা করেও সাপটিকে সরানো সম্ভব হয়নি। যখনই একটি গর্ত বন্ধ করা হতো, সাপটি কবরের অন্য কোনো দিক থেকে, এমনকি নিচ থেকেও আবির্ভূত হতে থাকে।
জোহর থেকে আসর এবং মাগরিব গড়িয়ে এশা পর্যন্ত দাফনকাজ বন্ধ থাকে। এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, মৃত ব্যক্তির কবরে সাপ অপেক্ষা করছে। এই দৃশ্য যেমন ছিল ভয়ংকর, তেমনই ছিল রহস্যময়।
কারণ অনুসন্ধানের ব্যর্থ প্রচেষ্টা
উপস্থিত আলেম ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী প্রথমে মৃত ব্যক্তির কোনো দেনা-পাওনা বা জাগতিক দায়বদ্ধতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। সামর্থ্যবান পুত্র অনেক খুঁজে কিছু আর্থিক লেনদেন পরিশোধও করেন। এরপর যাচাই করা হয়, মৃত ব্যক্তি জীবনে কারও ওপর জুলুম করেছিলেন বা কারও মনে কষ্ট দিয়েছিলেন কিনা। সবশেষে তার আমল বা ইবাদতের অবস্থাও পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই কোনো গুরুতর ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা দিয়ে এই অলৌকিক ঘটনার ব্যাখ্যা মেলে।
এক সাধারণ কর্মীর অসাধারণ পরামর্শ
যখন উপস্থিত আলেমরা রায় দিলেন যে, এই সাপ হয়তো মৃত ব্যক্তির ভাগ্যেই লেখা ছিল এবং আর দেরি না করে দাফন সম্পন্ন করা উচিত, তখন এক সাধারণ কবরস্থানের কর্মচারী কথা বলার অনুমতি চান। প্রথমে তাকে তিরস্কার করা হলেও, মৃত ব্যক্তির পুত্র তাকে সম্মান দেখিয়ে কথা বলার সুযোগ দেন।
ওই কর্মচারী অত্যন্ত বিনীতভাবে বলেন, “সমস্যার মূল কারণ হয়তো মৃত ব্যক্তির মধ্যে নয়, বরং তাঁর জীবিত সন্তানের মধ্যেই নিহিত। বাবার বেশভূষা ও জীবনযাপনের সঙ্গে পুত্রের জীবনযাত্রার বিস্তর ফারাক। সম্ভবত, সন্তানের দ্বীন থেকে বিচ্যুতির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পুত্র যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং আল্লাহর কাছে তার বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে এই সংকট কেটে যেতে পারে।”
তওবা এবং ঐশী সমাধান
এই পরামর্শ শুনে অনেকেই সন্দিহান হলেও, পুত্র বিষয়টি অনুধাবন করেন। তিনি এশার নামাজের পর একান্তে আল্লাহর দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজের ভুলের জন্য তওবা করেন, ভবিষ্যৎ জীবনে সৎপথে চলার ওয়াদা করেন এবং পিতার মুক্তির জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন।
ফিরে এসে তিনি এবং উপস্থিত সবাই বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলেন, কবরে সেই সাপের আর কোনো অস্তিত্বই নেই।
ঘটনার মূল শিক্ষা
উপস্থিত একজন প্রবীণ আলেম মন্তব্য করেন, “সন্তানের দোয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দোয়া। সন্তানের искренней তওবার শক্তি এতটাই যে, সে যদি কবরস্থানের সবার মুক্তির জন্য দোয়া করত, আল্লাহ হয়তো তাও কবুল করতেন।”
এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সন্তান হলো পৃথিবীতে রেখে যাওয়া শ্রেষ্ঠ ‘সাদকায়ে জারিয়া’। আমাদের নিজেদের জীবনযাত্রার ওপর পরকালে আমাদের প্রয়াত পিতামাতার শান্তি ও মুক্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাদের কবরের শাস্তির কারণ যেন আমরা না হই, সেদিকে প্রত্যেক সন্তানের সচেতন থাকা অপরিহার্য।



