দেশবাংলাদেশবিভাগবিশ্লেষণ

কুমিল্লা-নোয়াখালী বিভাগ বিতর্ক: আবেগ পরিহার করে সমাধানে জোর দেওয়ার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসনিক বিভাগকে ‘জনগণের অর্থের অপচয়’ এবং নিছক ‘আমলাতান্ত্রিক বিভাজন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের বিভাগীয় সদর দপ্তর নিয়ে চলমান বিতর্ককে অনাকাঙ্ক্ষিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মামুন উল হক মনে করেন, বিভাগীয় কাঠামো দেশের সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই আবেগীয় দাবিকে কেন্দ্র করে দুটি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে তিক্ততা ছড়াচ্ছে, যা কাম্য নয়।

এক বিশ্লেষণে অধ্যাপক মামুন উল হক বলেন, “বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় বিভাগের কোনো ইতিবাচক গুরুত্ব নেই। ইতোমধ্যে গঠিত বিভাগগুলোর জীবনমান বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই কাঠামোর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে—এমন কোনো সমীক্ষা প্রতিবেদন আমাদের হাতে নেই। বরং বিভাগ ঘোষণার পর বিভাগীয় কার্যালয় স্থাপনের নামে নতুন পদ সৃষ্টি, কৃষি জমি অধিগ্রহণ এবং অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই ঘটেনি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন বরাবরই একটি রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে রয়ে গেছে, যা বাস্তবে রূপ পায়নি। তাঁর মতে, ডিজিটাল সেবা ও অটোমেশনের যুগে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের চেয়ে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন অনেক বেশি জরুরি। তাই বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবিকে তিনি অঞ্চলগুলোর উন্নয়নের চেয়ে আবেগের সাথেই বেশি সম্পর্কিত বলে মনে করেন।

অধ্যাপক হক কুমিল্লা ও নোয়াখালীর মধ্যকার চলমান বিতর্ক প্রসঙ্গে বলেন, “এই দুটি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবেই এক অম্লমধুর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিভাগ বিতর্ককে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, তা এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলছে।”

এই অচলাবস্থা নিরসনে এবং বিতর্ক এড়াতে তিনি দুটি বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরেন:

প্রথম প্রস্তাব: কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের সমন্বয়ে একটিই বিভাগ গঠন করা হলে এর সদর দপ্তর কোনো জেলার সদরে না করে ফেনীতে স্থাপন করা যেতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর এবং রেলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ফেনীতে সদর দপ্তর স্থাপিত হলে কোনো জেলার বাসিন্দাদেরই সমস্যায় পড়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে মহাসড়কের পাশে ফেনী সদর ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলাকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় অফিসগুলো গড়ে তোলা যেতে পারে।

দ্বিতীয় প্রস্তাব: যদি দুটি আলাদা বিভাগ গঠন করা হয়, তবে বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রাক্তন জেলাগুলোকে নিয়ে তা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগের সদর দপ্তর কোথায় হবে, তা অন্তর্ভুক্ত জেলাগুলোর যোগাযোগের সুবিধা বিচার করে নির্ধারণ করতে হবে।

অধ্যাপক মামুন উল হক সবশেষে সতর্ক করে বলেন, “অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও অহংবোধ অত্যন্ত বিপজ্জনক। গত পঞ্চাশ বছরে এই আবেগ ও অহংবোধের খেলার কারণেই দেশে জনবান্ধব প্রশাসনিক ব্যবস্থা বা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি।” তিনি বিভাগ প্রতিষ্ঠার মতো একটি আবেগীয় বিষয় যেন বিদ্যমান সামাজিক সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট না করে, সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button