ইসলাম ধর্ম

বিতর সালাতের কুনুত: রাসূল (ﷺ)-এর শেখানো বিশেষ মুনাজাত ও এর বিধান

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: বিতর সালাত মুসলিমদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা এশার সালাতের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই সালাতের অন্যতম একটি বিশেষ অংশ হলো দু’আ কুনুত, যা মূলত আল্লাহর কাছে সুরক্ষা, হেদায়েত এবং বরকত প্রার্থনার এক অনবদ্য সংকলন। এই দু’আটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর প্রিয় দৌহিত্র হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ)-কে শিখিয়েছিলেন।

রাসূল (ﷺ)-এর শেখানো সেই দু’আ

হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দিয়েছেন, যা আমি বিতর সালাতে পাঠ করি।

আরবিবাংলা উচ্চারণবাংলা অর্থ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَআল্লাহুম্মা ইহদিনী ফীমান হাদাইতা, ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইতা, ওয়া বা-রিক লী ফীমা আ’তাইতা, ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা। ফাইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্বদা ‘আলাইকা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইতা, তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা’আলাইতা।“হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়েত করেছ, আমাকেও তাদের সাথে হেদায়েত কর। যাদেরকে তুমি নিরাপত্তা দান করেছ, তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপত্তা দাও। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, তাদের সাথে আমারও অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তোমার নির্ধারিত অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা কর। নিশ্চয়ই তুমিই ফয়সালাকারী, তোমার বিরুদ্ধে কেউ ফয়সালা করতে পারে না। তুমি যার বন্ধু হও, সে কখনও অপমানিত হয় না। হে আমাদের রব, তুমি বরকতময় ও সুমহান।”

হাদিসের মান ও উৎস:
এই হাদিসটি বিভিন্ন প্রখ্যাত হাদিসগ্রন্থে সংকলিত হয়েছে এবং হাদিসবিশারদদের মতে এটি সহীহ (বিশুদ্ধ)
[হাদিস সূত্র: জামে আত-তিরমিজি: ৪৬৪, সুনানে আন-নাসায়ী: ১৭৪৫, সুনানে আবূ দাউদ: ১৪২৫, ইরওয়াউলিল গালিল: ৪২৯, মিশকাত: ১২৭৩]

কুনুত পাঠের বিধান ও আলেমদের অভিমত

বিতর সালাতে দু’আ কুনুত পাঠ করার সময় ও পদ্ধতি নিয়ে আলেমদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা মূলত হাদিসের বিভিন্ন ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।

  • কখন পাঠ করতে হবে: প্রখ্যাত সাহাবী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) এবং সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারক (রহঃ) সহ কুফার ফকীহগণের মতে, সারা বছরই বিতর সালাতে কুনুত পাঠ করা। অন্যদিকে, হযরত ‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি কেবল রমজান মাসের শেষার্ধে কুনুত পাঠ করতেন। ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) এই মতটি গ্রহণ করেছেন।
  • রুকুর আগে না পরে: عبدالله ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রুকুর পূর্বে কুনুত পাঠ করাকে উত্তম মনে করতেন। অন্যদিকে, হযরত ‘আলী (রাঃ) রুকুর পর কুনুত পাঠ করতেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়।

তবে সকল আলেম এ বিষয়ে একমত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত এই দু’আটি বিতরের কুনুতের জন্য সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও উত্তম। এটি আল্লাহর একত্ব, ক্ষমতা এবং তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার এক চমৎকার নিদর্শন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button