বিশ্ববিশ্লেষণবৈশ্বিকমতামতসংগৃহীত সংবাদ

ধ্বংসস্তূপের ওপর জীবনের অঙ্গীকার: যুদ্ধের গাজায় বিয়ে এখন টিকে থাকার সংগ্রাম

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: যুদ্ধ কেবল একটি ভূখণ্ডকেই ধ্বংস করে না, বদলে দেয় একটি সমাজের বহু বছরের পুরোনো রীতি, ঐতিহ্য আর সামাজিক প্রথাকেও। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান সংঘাত সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার পাশাপাশি বদলে দিয়েছে বিয়ের মতো এক পবিত্র সামাজিক বন্ধনের রূপরেখাও। যেখানে একসময় জাঁকজমক ও বিশাল অংকের দেনমোহর ছিল স্বাভাবিক বিষয়, সেখানে আজ টিকে থাকা আর প্রজন্মকে রক্ষা করাই হয়ে উঠেছে বিয়ের মূল উদ্দেশ্য।

যুদ্ধের আগে গাজার সরকারি আইন অনুযায়ী, ছেলেদের র ন্যূনতম বয়স ছিল ১৮ এবং মেয়েদের ১৭ বছর। তবে বিশেষ আবেদনে এর আগেও বিয়ের সুযোগ ছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজার প্রায় ৩৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হতো ১৮ বছর বয়সের আগে এবং ৫ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হতো মাত্র ১৫ বছর বয়সে।

সে সময় বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল দেনমোহর, যার গড় পরিমাণ ছিল প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫ লাখ টাকারও বেশি। এই অর্থের বড় একটি অংশ পাত্রের পরিবার পরিশোধ করত। পাত্রীর জন্য পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট বা সুসজ্জিত ঘরের শর্তও ছিল সাধারণ বিষয়।

কিন্তু চলমান সংঘাত এই চিত্রকে পুরোপুরি পাল্টে দিয়েছে। আজ গাজায় একটি বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বাংলাদেশী মুদ্রায় ২০ হাজার টাকাও ছাড়ায় না। সামাজিক মর্যাদা বা কুফু মেলানোর আড়ম্বর নেই, মোহরানার পরিমাণ নিয়ে নেই কোনো দরকষাকষি। অট্টালিকার স্বপ্ন নয়, তাঁবুই এখন তাদের আশ্রয় ও সংসার।

গাজার অধিবাসীদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখা। জাগতিক জাঁকজমক বা সামাজিক শর্তের চেয়ে একটি নতুন জীবন শুরু করা এবং পরিবার গঠন করাই তাদের মূল লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। এই কঠিন বাস্তবতা তাদের শিখিয়েছে, জীবনের প্রয়োজনে কীভাবে অপ্রয়োজনীয় প্রথাগুলোকে পেছনে ফেলতে হয়।

যেমনটি বলা হয়, “যুদ্ধ একজন বালককে পুরুষে পরিণত করে, আর সেই যুদ্ধেই একজন পুরুষের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়।” গাজার তরুণরা আজ সেই কঠিন বাস্তবতারই মুখোমুখি, যেখানে টিকে থাকার সংগ্রামই তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button