ইস্তেগফার: সংখ্যায় বেশি, নাকি গভীর অনুতাপে? একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্লেষণ
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু অনেক মুসলিম এই প্রশ্নটি নিয়ে দ্বিধায় থাকেন যে, ইস্তেগফার কি অধিক সংখ্যায় দ্রুত পড়া উচিত, নাকি বুঝে-শুনে ধীরস্থিরভাবে অনুতাপ সহকারে করা ভালো? এই প্রতিবেদন কোরআন-হাদিসের আলোকে এবং বিজ্ঞ আলেমদের উক্তি অনুযায়ী একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান তুলে ধরবে।
সংখ্যায় বেশি ইস্তেগফারের গুরুত্ব:
ইস্তেগফার অধিক সংখ্যায় পাঠ করা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ আমল। এর সপক্ষে যুক্তিগুলো নিম্নরূপ:
- নবীজীর (সা.) সুন্নাত: রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার ইস্তেগফার করতেন, যা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এটি উম্মতের জন্য একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
- বরকতের চাবিকাঠি: পবিত্র কোরআনে সূরা নূহে ইস্তেগফারকে রিজিক বৃদ্ধি, বৃষ্টি বর্ষণ এবং সন্তান-সন্ততি লাভের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বরকতের উৎস বলা হয়েছে।
- গুনাহ মোচন ও বিপদ মুক্তি: অধিক ইস্তেগফার গুনাহ মাফ, রিজিকে বরকত এবং বালা-মুসিবত দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
তবে, কেবল মুখে আওড়িয়ে যাওয়া যথেষ্ট নয়। ইস্তেগফার করার সময় অন্তরে এই অনুভূতি থাকা উচিত যে, আমি কার কাছে ক্ষমা চাইছি এবং কেন চাইছি।
ধীরস্থির ও অনুতপ্ত ইস্তেগফারের প্রয়োজনীয়তা:
ইস্তেগফার যদি অনুতাপ ও গভীর মনোযোগ সহকারে করা হয়, তবে তার প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী।
- গভীর প্রভাব: মন থেকে উচ্চারিত একটি “আস্তাগফিরুল্লাহ” হাজারো প্রাণহীন জিকিরের চেয়েও বেশি ফলদায়ক হতে পারে।
- আল্লাহর প্রিয়: চোখের পানিতে মিশে যাওয়া ইস্তেগফার আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এটি বান্দার বিনয় ও অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ।
- প্রকৃত তাওবা: যে ইস্তেগফার অন্তরের গুনাহকে স্বীকার করে আসে, তা কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং প্রকৃত তাওবা বা প্রত্যাবর্তন। ইমাম ইবনে কাইয়িম (রাহ.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কেবল মুখে ইস্তেগফার করে, অথচ অন্তরে অনুশোচনা থাকে না – সে যেন নিজের সাথে ঠাট্টা করে।”
সমাধান: ভারসাম্য স্থাপন:
সংখ্যা ও মনোযোগ—এই দুটিকেই ইস্তেগফারের ক্ষেত্রে একত্রিত করা প্রয়োজন। একটি ভারসাম্যপূর্ণ রুটিন আমাদের ইস্তেগফারের পূর্ণ সুফল লাভে সাহায্য করতে পারে:
১. দৈনিক অভ্যাস: দিনের বিভিন্ন সময়ে (যেমন: কাজের ফাঁকে, হাঁটার সময়) মুখে বারবার “আস্তাগফিরুল্লাহ” পাঠ করা। এতে জিহ্বা সর্বদা আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে।
২. মনোযোগী মুহূর্ত: নামাজের পর অথবা নির্জন পরিবেশে কিছু সময় ধীরে ধীরে, মনোযোগ সহকারে এবং অনুতাপ নিয়ে ইস্তেগফার করা। এটি আত্মার পরিশুদ্ধিতে সহায়ক হবে।
৩. সাপ্তাহিক বিশেষ সেশন: সপ্তাহে অন্তত একদিন (যেমন: জুম্মার রাতে) আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে মুনাজাত করা, অনুতপ্ত হৃদয়ে কান্নামিশ্রিত দোয়ায় তাওবা ও ইস্তেগফার করা। এটি আত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
উপসংহার:
ইস্তেগফারের সংখ্যায় বরকত রয়েছে, কারণ এটি আল্লাহর স্মরণকে জাগ্রত রাখে। তবে, যদি হৃদয়ে অনুশোচনা না থাকে, তবে সেই ইস্তেগফার অনেক সময় ফলহীন হতে পারে। সুতরাং, মুখকে সচল রাখতে সংখ্যাকে কাজে লাগান এবং হৃদয়কে পরিষ্কার করতে অনুতাপপূর্ণ ইস্তেগফারের আশ্রয় নিন। এই উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ই আমাদের ইস্তেগফারকে আরও ফলপ্রসূ ও আল্লাহ তাআলার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।



