অপরাধএক্সক্লুসিভদেশনোয়াখালীপ্রশাসনবাংলাদেশসম্পাদকীয়

চৌমুহনীতে মদখোর পিতা পুত্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনীতে মদখোর পিতা পুত্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। পিতা আবুল হোসেন ও তার পুত্র ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় মদ খাওয়ার লাইসেন্স নিয়ে মদের ব্যবসা করারও অভিযোগ উঠেছে। এলাকায় সন্ত্রাসী পালন, কিশোর গ্যাং এর সেল্টারদাতা ও নানা অপরাধের সাথে জড়িত এই পিতা-পুত্র।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চৌমুহনী পৌরসভার গনিপুর গ্রামের মৃত আলী আজ্জম ব্যাপারীর পুত্র আবুল হোসেন দীর্ঘদিন থেকে চৌমুহনী হকার্স মার্কেট এলাকায় বসবাস করে আসছেন। তিনি নোয়াখালীর স্থানীয় বাসিন্ধা হলেও ১০১, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ি, ঢাকার ঠিকানা ব্যবহার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থেকে মদ খাওয়ার লাইসেন্স নেন। এই লাইসেন্সের অপব্যবহার করে আবুল হোসেন, পুত্র ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় অন্যন্যা মদ বিক্রেতার মাধ্যমে মদের ব্যবসা করে আসছেন। তারা মদ খেয়ে প্রায় সময় হকার্স মার্কেট এলাকায় মাতলামি করে থাকেন। এলাকাবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। মাঝে মধ্যে অতিষ্ঠ মানুষ আবুল হোসেনকে গণপিটুনিও দিয়ে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আসলে মদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আবুল হোসেন কৌশলে ফ্যাসিষ্টের দোসর স্থানীয় সাবেক এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ ও চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র খালেদ সাইফুল্যার ঘনিষ্ট হন। এমপি ও মেয়রের ছত্রছায়ায় তাদের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ইসতিয়াক আলম সোহান, মাজেদ রাসেল, রায়হান, শ্রাবণ ও তাদের লোকজনকে মাসিক মাসওয়ারা দিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে চৌমুহনী হর্কাস মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে মদ বিক্রি করে আসছে। তার মদের ব্যবসার পার্টনার পশ্চিম হাজিপুর গ্রামের ৭নং ওয়ার্ডের তরিক মেম্বার বাড়ির মমিন উল্যার পুত্র আলমগীর হোসেন। এই আলমগীরের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ও আদালতে ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। তাদের আরেক সহযোগি গনিপুর ছাপরাশি বাড়ির সাহাব উদ্দিন। এছাড়াও তার ছেলে ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় মোটর সাইকেলে করে মদ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

সাবেক এম পি মামুনুর রসিদ কিরনের সাথে আবুল হোসেন


আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে বর্তমানে মদ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার চৌমুহনীস্থ হকার্স মার্কেটের বাসার গোপন কক্ষ তল্লাশি করলে প্রচুর পরিমানে বাংলা মদ পাওয়া যাবে বলেন অনেকেই অভিযোগ করেন।
ইতোমধ্যে আবুল হোসেন নোয়াখালী জাতীয় হকার্স মার্কেট সমবায় সমিতি লিঃ এর চৌমুহনী হকার্স মার্কেটের ১নং ভাড়া শেডের তাহেরা ট্রেডার্স এর মালিক হাজী আবদুল মতিনের কোল্ড ড্রিংক্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাতের অন্ধকারে তালা ভেঙ্গে প্রায় ৫০লক্ষ টাকার মালামাল ট্রাক বোঝাই করে লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাহেরা ট্রেডার্স নামক সাইন বোর্ড ফেলে দিয়ে এরাবিয়ার শাড়ী বিতান নামে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলারও অভিযোগ উঠে। আবদুল মতিনের পক্ষে সমিতির অফিসে এ ঘটনায় কয়েকটি দরখাস্ত এসেছে। সমিতির একাধিক সদস্য বলেন, ১নং ভাড়াটিয়া শেডের দোকানগুলি সমিতির নিজস্ব সম্পত্তি। আবুল হোসেন ইতোপূর্বে হকার্স মার্কেটের কয়েকটি দোকান দখল করে নেয় এবং হকার্স মার্কেটের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মান করে রামরাজত্ব কায়েম করেছে। একাধিক সূত্র জানায়, তার দখলকৃত সমিতির সম্পত্তি নিজ নামে নেয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তিনি আবেদন করে রেখেছেন।
অপরদিকে ২০২২ সালে অলোচিত মাইজদী জজ কোর্টের একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে মারধার করে পানিতে ফেলে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় কিশোর গ্যাংদের সাথে জড়িত ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় ও তার সহযোগিদের আসামী করে মামলা হলে পুলিশ হৃদয়কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। পরে এমপি মামুনুর রশিদ কিরনের সহযোগিতায় ওই আইনজীবিকে ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দফারফা হয়। মদ পান করে মার্কেটে আবুল হোসেন ওরফে ভজা মাতাল ও উলুঙ্গ অবস্থায় হকার্স মার্কেটে হোটেলে গিয়ে তাদের খাওয়ার নিয়ে কাড়া-কাড়ি শুরু করে খাওয়ার না দিলে খাওয়ার ফেলে নষ্ট করে। অনেক সময় হোটেলের খাবার নিয়ে টাকা না দিয়ে চলে যায়। টাকা চাইলে তাদের মারধরের হুমকি দেয়। মদ খেয়ে মাতলামি ও অপকর্মের কারণে ব্যবসায়ীরা তাকে পিলারের সাথে বেঁধে রাখে। আবুল হোসেন চৌমুহনী হকার্স মার্কেটের নিরিহ ব্যবসায়ীদেরকে তার থেকে সুদের টাকা নেওয়ার জন্য বাধ্য করে পরবর্তীতে সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান দখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার অপকর্মের কারণে হকার্স মার্কেট সমিতি থেকে পরিচালকের পদ চলে গেছে বলে জানা গেছে। আবুল হোসেন ও তার পুত্র হৃদয়ের বিরুদ্ধে মার্কেটের ও এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায়না। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই নেমে আসে নির্যাতন ও প্রশাসন দিয়ে হয়রানি। তার অপকর্মের পিরিস্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা তার এসকল অপরাধের বিচার দাবী করে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত আবুল হোসেন ও তার পুত্র ইয়াছিন আরাফাত হৃদয়কে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে কল করলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে জেলা গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, আবুল হোসেন ও তার ছেলের সব অপকর্মের ফিরিস্তি প্রশাসনের হাতে আছে, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button