দেশবাংলাদেশরংপুরসংগঠন

সুদ কারবারি হেমন্তীর অত্যাচারে ১২ পরিবার কলোনিছাড়া: রংপুর প্রেসক্লাবে অবস্থান কর্মসূচি

রংপুর জেলা প্রতিনিধি: সুদ ব্যবসার আড়ালে চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রংপুর সদর হাসপাতাল কলোনির হেমন্তী রানী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। তাদের অত্যাচারে কলোনির অন্তত ১২টি পরিবার বাড়িছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। গতকাল শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টায় রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এই উচ্ছেদের শিকার পরিবারগুলো বাড়ি ফেরা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

অবস্থান কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী সজনি রানী জানান, দীর্ঘদিন ধরে হেমন্তী রানী ও তার সহযোগী টুটুল, তপন, রণজিৎ, জয়, রানাসহ একটি চক্র কলোনির বাসিন্দাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। তার কথা না শুনলে এলাকায় থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। সজনি রানী অভিযোগ করেন, হেমন্তী তার মায়ের কাছে সুদের টাকা পায় দাবি করে তাকে মেরে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

সদর হাসপাতাল কলোনির সাবেক সভাপতি শাকিল বাসফোরের মা জেবা রানী বলেন, সুদের টাকার জন্য হেমন্তী যখন তখন মানুষকে মারধর করে, ঘরে তালা দেয় এবং নির্যাতন করে। এসবের প্রতিবাদ করলে মারধরের শিকার হতে হয়। তিনি জানান, গত ১৭ আগস্ট রাতে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে হেমন্তীর নির্দেশে রণজিৎ তার বড় ছেলে শাকিলের মাথায় চেয়ার দিয়ে আঘাত করে। এতে শাকিলের মাথা ফেটে যায় এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি সেলাই দিতে হয়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে পরিবারটি এখন বাড়িছাড়া।

জেবা রানী আরও অভিযোগ করেন, তারা থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে মামলা নিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশ কমিশনার (রংপুর মেট্রো) মহোদয়ের হস্তক্ষেপে মামলা রেকর্ড হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। বরং মামলা করার কারণে তার ছোট ছেলেকেও মারধর করা হয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে আসামিরা ঘর থেকে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসহ সবকিছু লুটপাট করেছে বলেও তিনি জানান।

আরেক ভুক্তভোগী রেখা রানী বলেন, তার মেয়ে পছন্দ করে বিয়ে করায় হেমন্তী তাদের ওপর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করে। সেই টাকা দিতে না পারায় অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের এলাকাছাড়া করা হয়েছে। সামাজিক অনুষ্ঠানের নামেও এই চক্র তাদের ওপর নিপীড়ন চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। বাড়িছাড়া হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

ভুক্তভোগী রানী বাসফোর বলেন, সুদ ব্যবসা এবং নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে এলাকার লোকজনকে জরিমানা করে হেমন্তী লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন। তার দুই সন্ত্রাসী ছেলে, সহযোগী রানা, রণজিৎ, জয় এবং বাইরের ভাড়া করা গুন্ডাদের দিয়ে তিনি এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন। পুলিশ প্রশাসনেও তার বিশাল প্রভাব রয়েছে। একাধিক মামলা হওয়ার পরও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা এখনো এলাকাবাসীকে হুমকি দিচ্ছে, মারধর করছে এবং বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে।

তিনি প্রশাসনের কাছে সুদ ব্যবসায়ী হেমন্তী, টুটুল, তপন, রণজিৎ, জয়, রানাসহ তার সহযোগীদের আক্রমণে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর বাড়ি ফেরা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আক্রমণকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button