
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা অঙ্গনে গত এক বছর ধরে অনিয়ম ও দখলদারিত্বের কালো ছায়া বিরাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের এক সময়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ফরিদা খানমের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদে তার আস্থাভাজন জাহিদুল করিম কচি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কে এই জাহিদুল করিম কচি?
‘সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচিত হলেও গত ১৭ বছরে জাহিদুল করিম কচির লেখা কোনো রিপোর্ট, কলাম বা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন জাতীয় বা স্থানীয় কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই তাকে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ‘আহ্বায়ক’ পদে বসানো হয়, যা স্থানীয় সাংবাদিক সমাজে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সুপারিশেই তিনি ক্লাবের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। ফরিদা খানম প্রশাসন থেকে অবসরে গেলেও কচির কর্তৃত্ব এখনও অটুট—বরং আরও বেশি দাপটের সাথে।
ক্লাব অফিস যেন ব্যক্তিগত কার্যালয়!
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, প্রেস ক্লাবের অফিস বর্তমানে কার্যত জাহিদুল করিম কচির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ক্লাবের নাম ব্যবহার করে তিনি অনিয়ম, চাঁদাবাজি, সদস্য ফরম বিক্রি এবং ‘ভুয়া সাংবাদিক’ তৈরির এক বিশাল বাণিজ্যের সাথে জড়িত।
কোটি টাকার সম্পদ ও প্লট
বিশেষ সূত্র থেকে জানা গেছে, জাহিদুল করিম কচি নিজের নামে অথবা পরিবারের সদস্যদের নামে দুটি প্লট এবং একটি নির্মাণাধীন ভবনের মালিক। এর মধ্যে একটি ভবন তার মেয়ের নামে রয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, প্রেস ক্লাবের ক্ষমতা অপব্যবহার করে কচি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এবং সেই অর্থে তিনি ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন।
দুদকে অভিযোগ দায়ের
ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জাহিদুল করিম কচির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে:
- ভুয়া সদস্য বানানোর নামে অর্থ আদায়।
- ক্লাবের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা দাবি।
- অনিয়মিত সদস্যদের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন।
- প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্লাব ব্যবহার।
সাংবাদিক না চাঁদাবাজ?
চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজের একটি বড় অংশ প্রশ্ন তুলেছেন, “কোন যোগ্যতায় জাহিদুল করিম কচি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আহ্বায়কের পদ পেলেন?” সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তার কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ দানা বেঁধেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিএনপি ঘরানার কিছু পরিচিত সাংবাদিকের নাম ব্যবহার করে ফায়দা নিচ্ছেন।
প্রকৃত সাংবাদিকরা বঞ্চিত
চট্টগ্রামের পেশাদার সাংবাদিকদের অভিযোগ, তাদের অনেকেই ক্লাবের সদস্য ফরম পাননি। বঞ্চিতদের তালিকায় রয়েছেন:
- সিটিজি নিউজের প্রধান সম্পাদক আজগর আলি মানিক।
- সময়ের আলো পত্রিকার সহকারী সম্পাদক কামাল উদ্দীন।
- বিজয় টিভির সাংবাদিক তৈয়ব চৌধুরী।
- আমাদের চট্টগ্রামের সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী।
- সিটিজি নিউজের প্রকাশক নুরুল আবছার আনছারী।
- সাংবাদিক হানান রহিম তালুকদার, ওমর ফারুক, সমিরন পাল।
- সি ভয়েজের সাংবাদিক মাহাবু আলম।
তারা জানিয়েছেন, কচির নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রকৃত সাংবাদিকদের সদস্য ফরম না দিয়ে, বরং এসব ফরম বিক্রি করেছে—কারও কাছ থেকে ১,০০০ টাকা আবার কারও কাছ থেকে লক্ষ টাকার বিনিময়ে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সমাজের দাবি
চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান সাংবাদিকরা অবিলম্বে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বর্তমান কমিটি বাতিল করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব গঠনের দাবি জানিয়েছেন।



