ইসলাম ধর্ম

জান্নাতের পথ ও সাফল্যের সূত্র: সাহাবাদের ২৫টি প্রশ্ন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কালজয়ী উত্তর

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মুসলিম জীবনে পরকালীন মুক্তি এবং দুনিয়ার সাফল্য অর্জনে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দিকনির্দেশনা অপরিহার্য। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বিভিন্ন সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে হাজির হতেন এবং তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সেগুলোর উত্তর দিতেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য অমূল্য জ্ঞানভান্ডার হিসেবে বিবেচিত। এখানে ২৫টি এমন প্রশ্ন ও তার উত্তর তুলে ধরা হলো, যা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনকে আলোকিত করতে পারে:

১. ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা:
প্রশ্ন: আমি ধনী হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: অল্পতুষ্টি অবলম্বন করো; ধনী হয়ে যাবে।

২. শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হওয়ার উপায়:
প্রশ্ন: আমি সবচেয়ে বড় আলেম (ইসলামী জ্ঞানের অধিকারী) হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: তাক্বওয়া (আল্লাহ ভীরুতা) অবলম্বন করো, আলেম হয়ে যাবে।

৩. সম্মান অর্জনের পথ:
প্রশ্ন: সম্মানী হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: সৃষ্টির কাছে চাওয়া বন্ধ করো; সম্মানী হয়ে যাবে।

৪. ভালো মানুষ হওয়ার সূত্র:
প্রশ্ন: ভাল মানুষ হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: মানুষের উপকার করো।

৫. ন্যায়পরায়ণতার সংজ্ঞা:
প্রশ্ন: ন্যায়পরায়ণ হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: যা নিজের জন্য পছন্দ করো; তা অন্যের জন্যও পছন্দ করো।

৬. শক্তিশালী হওয়ার রহস্য:
প্রশ্ন: শক্তিশালী হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: আল্লাহর উপর ভরসা করো।

৭. আল্লাহর দরবারে বিশেষ মর্যাদা:
প্রশ্ন: আল্লাহর দরবারে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ (জিকির) করো।

৮. রিযিকের প্রশস্ততা:
প্রশ্ন: রিযিকের প্রশস্ততা চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: সর্বদা অজু অবস্থায় থাকো।

৯. দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা:
প্রশ্ন: আল্লাহর কাছে সমস্ত দোয়া কবুলের আশা করি!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: হারাম খাবার হতে বিরত থাকো।

১০. ঈমানের পূর্ণতা:
প্রশ্ন: ঈমানে পূর্ণতা কামনা করি!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: চরিত্রবান হও।

১১. কেয়ামতের দিন গুনাহমুক্ত সাক্ষাৎ:
প্রশ্ন: কেয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে গুনাহমুক্ত হয়ে সাক্ষাৎ করতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: জানাবত তথা গোসল ফরজ হওয়ার সাথে সাথে গোসল করে নাও।

১২. গুনাহ কমানোর উপায়:
প্রশ্ন: গুনাহ কিভাবে কমে যাবে?
রাস রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: বেশি বেশি ইস্তেগফার (আল্লাহর নিকট কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা) করো।

১৩. কেয়ামত দিবসে আলোর প্রত্যাশা:
প্রশ্ন: কেয়ামত দিবসে আলোতে থাকতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: জুলুম করা ছেড়ে দাও।

১৪. আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের কৌশল:
প্রশ্ন: আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ কামনা করি!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: আল্লাহর বান্দাদের উপর দয়া-অনুগ্রহ করো।

১৫. দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার প্রার্থনা:
প্রশ্ন: আমি চাই আল্লাহ তা’য়ালা আমার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখো।

১৬. অপমানিত হওয়া থেকে রক্ষা:
প্রশ্ন: অপমানিত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে চাই?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: যিনা (ব্যভিচার) থেকে বেঁচে থাকো।

১৭. আল্লাহ ও রাসূলের প্রিয়ভাজন হওয়া:
প্রশ্ন: আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) এর নিকট প্রিয় হতে চাই?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের (সা.) নিকট পছন্দনীয়, তা নিজের জন্য প্রিয় বানিয়ে নাও।

১৮. আল্লাহর একান্ত অনুগত হওয়া:
প্রশ্ন: আল্লাহর একান্ত অনুগত হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: ফরজসমূহকে গুরুত্বের সাথে আদায় করো।

১৯. ইহসান সম্পাদনকারী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা:
প্রশ্ন: ইহসান সম্পাদনকারী হতে চাই!
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো যেন তুমি আল্লাহকে দেখছো অথবা তিনি তোমাকে দেখছেন।

২০. গুনাহ মাফে সহায়তাকারী বস্তু:
প্রশ্ন: ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! কোন বস্তু গুনাহ মাফে সহায়তা করবে?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: ক) কান্না (আল্লাহর নিকট, কৃত গুনাহের জন্য)। খ) বিনয়। গ) অসুস্থতা।

২১. জাহান্নামের আগুন শীতলকারী:
প্রশ্ন: কোন জিনিস জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনকে শীতল করবে?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: দুনিয়ার মুসিবতসমূহ।

২২. আল্লাহর ক্রোধ ঠান্ডা করার উপায়:
প্রশ্ন: কোন কাজ আল্লাহর ক্রোধ ঠান্ডা করবে?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: গোপন দান এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা।

২৩. সবচাইতে নিকৃষ্ট কী:
প্রশ্ন: সবচাইতে নিকৃষ্ট কী?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: দুশ্চরিত্র এবং কৃপণতা।

২৪. সবচাইতে উৎকৃষ্ট কী:
প্রশ্ন: সবচাইতে উৎকৃষ্ট কী?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: সচ্চরিত্র, বিনয় এবং ধৈর্য।

২৫. আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার উপায়:
প্রশ্ন: আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার উপায় কী?
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উত্তর: মানুষের উপর রাগান্বিত হওয়া পরিহার করো।

এই মূল্যবান নির্দেশনাগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করে আমরা যেমন ব্যক্তিগত উন্নতি সাধন করতে পারি, তেমনি পরকালীন নাজাতের পথও সুগম করতে পারি। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে এই উপদেশগুলো আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button