মা ও বাবার ভালোবাসার ভিন্ন রূপ: নীরব পাহাড়ের মতো পিতার আশ্রয়
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: পরিবারে মায়ের ভালোবাসা প্রায়শই প্রত্যক্ষ ও দৃশ্যমান, যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অন্যদিকে, বাবার ভালোবাসা প্রায়শই নীরব, কঠোর এবং বুঝতে অনেক সময় লাগে। শৈশবে যাকে অনেক সময় ‘বিরক্তিকর’ মনে হয়, পরিণত বয়সে সেই বাবার ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। মা যেমন নদীর মতো চলমান স্নেহের ধারা, বাবা তেমনই স্থির পাহাড়ের মতো নির্ভরতার প্রতীক। নিচে কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো, যা মা ও বাবার ভালোবাসার ভিন্নতা ব্যাখ্যা করে:
১. খাবার নিয়ে ভাবনা:
মা সাধারণত জিজ্ঞেস করেন, “খেয়েছ?” তার প্রশ্নটি থাকে স্নেহভরা। অন্যদিকে, বাবা বলেন, “টাকা বাঁচিয়ে খাও!” বাবার এই কথাটির পেছনে থাকে পরিবারের আর্থিক দায়িত্বের গভীর চিন্তা।
২. আঁখি জলের প্রতি প্রতিক্রিয়া:
তোমার চোখে জল দেখলে মা বুকে জড়িয়ে ধরেন, সান্ত্বনা দেন। বাবা হয়তো বলেন, “এত দুর্বল কেন?” এই আপাত কঠোরতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক অজানা ভয়—তোমাকে যেন কেউ আঘাত না করে।
৩. ভুলের প্রতি মনোভাব:
তোমার ভুল দেখে মা হেসে দেন বা ক্ষমা করে দেন, কারণ তার ভালোবাসা মায়ার বাঁধনে গলে যায়। বাবা একই ভুলে রেগে যান, কারণ তিনি আশঙ্কা করেন—এই ভুল ভবিষ্যতে তোমার জীবন নষ্ট করতে পারে।
৪. সান্ত্বনা বনাম প্রস্তুতি:
মা তোমাকে আবেগপ্রবণ সান্ত্বনা দেন, আর বাবা তোমাকে জীবনের কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত করতে শেখান। একজন হৃদয়কে নরম করেন, অন্যজন জীবনযুদ্ধের জন্য শক্ত করেন।
৫. রাতের বেলায় বাবার চিন্তা:
রাতে খাবার পর মা হয়তো বিশ্রাম নেন, কিন্তু বাবা তখনো আগামী মাসের স্কুল ফি, বাজারের খরচ, বিদ্যুতের বিল—এসবের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত থাকেন, কীভাবে সব প্রয়োজন পূরণ করবেন।
৬. ভালোবাসার প্রকাশভঙ্গি:
মা তার ভালোবাসা মুখে প্রকাশ করেন, আদরে বুঝিয়ে দেন। বাবা তার ভালোবাসা নীরবে প্রকাশ করেন—চুপচাপ তোমার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেন।
৭. ব্যর্থতার মুখোমুখি:
তোমার ব্যর্থতায় মা বলেন, “কিছু হবে না, আবার চেষ্টা করো।” বাবা হয়তো প্রশ্ন করেন, “কেন ব্যর্থ হলে?” তার এই প্রশ্নের মধ্যে লুকানো থাকে তীব্র আকাঙ্ক্ষা—তুমি যেন জীবনে সফল হও।
৮. ঘুমের সময় বাবার ভাবনা:
মা তোমার ঘুমের সময় চুলে হাত বুলিয়ে দেন, আদর করেন। বাবা হয়তো তখন দরজার বাইরে বসে ভাবেন—”আমার সন্তানের এই ঘুমটা যেন শান্তিতে কাটে, কোনো অভাব যেন তাকে ছুঁতে না পারে।”
৯. ঘরের ভেতর বনাম বাইরের জগৎ:
মা তোমাকে আদর করে ঘরের ভেতরে রাখেন, নিরাপদে আগলে রাখেন। বাবা তোমাকে বাইরের জগতে ঠেলে দেন, বলেন—”যাও, লড়ো জীবনের সঙ্গে।” কারণ মা যেমন বাঁচিয়ে রাখেন, বাবা তেমনই তোমাকে গড়ে তোলেন।
১০. উপলব্ধির মুহূর্ত:
হয়তো একদিন যখন বাবা আর থাকবেন না, তখনই বোঝা যায়—যাকে সবচেয়ে ‘বিরক্তিকর’ মনে হতো, তিনিই ছিলেন পরিবারের সবচেয়ে দৃঢ় স্তম্ভ, সবচেয়ে বড় আশ্রয়।
মায়ের ভালোবাসা এক অবিরাম নদীর মতো, যা সব সময় পাশে বয়ে চলে। আর বাবার ভালোবাসা পাহাড়ের মতো—겉ে নীরব ও স্থির থাকলেও, তা সবসময় আশ্রয় ও শক্তি দিয়ে যায়। আমরা ছোটবেলায় মাকে বুঝি, কিন্তু জীবনের প্রতিটি ধাপে বাবার নীরব ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে শিখি। তিনি ছিলেন ভালোবাসার এক কঠিন, অথচ নিবেদিত রূপ।



