সালাতের আদব রক্ষা: অনর্থক নড়াচড়া ও অন্যমনস্কতা পরিহার অপরিহার্য
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: সালাত বা নামাজ হলো মুমিন বান্দার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, অনেক মুসল্লীই সালাত আদায় করার সময় এমন কিছু অনর্থক কাজ ও অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়ায় লিপ্ত হন, যা সালাতের একাগ্রতা ও পবিত্রতা নষ্ট করে দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এই ধরনের অভ্যাস একটি বড় আপদ, যা থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যাবশ্যক
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে মুমিনদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন: “তোমরা আল্লাহর জন্য অনুগত হয়ে দাঁড়াও।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৮)। এই আদেশ পালনের মাধ্যমেই সালাতে বিনয় (খুশূ) প্রতিষ্ঠা করা যায়। আল্লাহ্ অন্যত্র মুমিনদের সফলতার অন্যতম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন: “নিশ্চয় সেই সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের সালাতে বিনীত থাকে।” (সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১-২)।
কিন্তু অনেক সালাত আদায়কারীই এই ঐশী বাণীর গভীর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। ফলস্বরূপ, সালাতের পবিত্রতা ও আদবের পরিপন্থী নানা কর্মকাণ্ডে তারা লিপ্ত হন।
সালাতের সময় অনর্থক নড়াচড়া ও অঙ্গভঙ্গি পরিহার করার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি নির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাজদার সময় কঙ্কর বা মাটি সমান করা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “সালাত অবস্থায় তুমি কিছু মুছতে পারবে না, একান্তই যদি করতে হয় তাহলে কংকরাদি একবার সমান করতে পারবে।” (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৪৬)।
এই হাদীসের ভিত্তিতে আলেম সমাজ মত দিয়েছেন যে, সালাতের মধ্যে যদি কেউ নিষ্প্রয়োজনে, বেশি মাত্রায় এবং লাগাতারভাবে নড়াচড়া করে, তবে তার সালাত বাতিল হয়ে যেতে পারে।
যারা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়েও অনর্থক খেলায় মগ্ন হয়, তাদের অবস্থা আরও উদ্বেগজনক। এমন মুসল্লী দেখা যায়, যারা ইবাদতে দাঁড়িয়েও ঘড়ির দিকে বারবার সময় দেখছেন, কাপড় বা চুল সোজা করছেন, আঙ্গুল দিয়ে নাক পরিষ্কার করছেন, এমনকি চোখ দিয়ে ডানে-বামে কিংবা আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, উপর দিকে তাকানোর বিষয়ে নবীজি (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, এতে চোখ উপড়ে ফেলা হতে পারে। এছাড়া, অন্যমনস্কতা ও অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়ার মাধ্যমে শয়তান খুব সহজেই সালাতের কিছু অংশ ছিনিয়ে নেয়। এসব ক্ষেত্রে তাদের মনে কোনো উদ্বেগ বা ভয় কাজ করে না। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৯৮২-৮৩)।
সালাতের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সংযোগের সময়। এই সংযোগকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং সফলকাম মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে, প্রত্যেক মুসল্লীকে অবশ্যই সালাতের বিনয় ও আদব রক্ষা করে চলতে হবে এবং অনর্থক সকল নড়াচড়া ও অন্যমনস্কতা পরিহার করতে হবে।



