অপরাধআইন ও বিচারচট্টগ্রামদেশবাংলাদেশসম্পাদকীয়

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ওসি সহ যুবদল নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যার মামলা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম নগরীর বহুল আলোচিত কুখ্যাত ফ্যাসিস্ট সরকারের লালিত পালিত আওয়ামী লীগের ওসি  আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  ও যুবদল নেতা-কর্মীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক নারী। এতে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু আইনে এবং অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করেন।

সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেন সাজু বেগম নামের ওই নারী। তিনি আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনির বাসিন্দা এবং মারা যাওয়া ওই যুবকের মা বলে জানা যায়।

মামলায় অভিযুক্ত আকবর শাহ থানার চার পুলিশ সদস্য হলেন  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইফ উল্লাহ, কনস্টেবল নুর মোহাম্মদ শাহাদাত ও সোহেল চাকমা। এজাহারে উল্লিখিত অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন আকবর শাহ থানা এলাকার জহুরুল ইসলাম লিটন, মো. রিপন, রুবেল, সুমন পারভেজ ও বিপ্লব। তাঁরা আকবর শাহ থানা যুবদলের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আসাদুল আলম সালেক  বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় এবং হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে বলা হয়, বাদী পরিবারসহ বিশ্ব কলোনি এম-ব্লকে ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁর স্বামী পেশায় একজন রিকশাচালক। তাঁদের একমাত্র সন্তান রাকিব হোসেনকে (২১) ২ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন আসামিরা। ১৬ অক্টোবর আসামি স্থানীয় পাঁচজন যুবক পুনরায় বাদীর ছেলে রাকিবের কাছে চাঁদা দাবি করেন। এ সময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা তাঁকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই এলাকার একটি মার্কেটের অফিসে নিয়ে যান। অফিসটি আসামি জহুরুল ইসলাম লিটনের বলে জানা গেছে।

বাদী উল্লেখ করেন, রাকিবকে সেখানে দড়ি দিয়ে বেঁধে হকিস্টিক, হাতুড়ি ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়। খবর পেয়ে রাকিবের বাবা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাঁকেও মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। পরে জহিরুল ইসলাম লিটন থানায় ফোন কল করে ঘটনাস্থলে পুলিশ এনে রাকিবকে তাঁদের হাতে তুলে দেন।

অত্র মামলাতে আরো উল্লেখ করা হয়, রাকিবকে আকবর শাহ থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সেখানে আরেক দফায় শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে থানা-পুলিশ তাঁকে নন-এফআইআর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। ওই দিন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের একটি আদালত রাকিবকে দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে পাঁচ দিনের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু রাকিবের পক্ষে জরিমানার টাকা না দিতে পারায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

বাদীর অভিযোগ, কারাগারে থাকা অবস্থায় রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর মা-বাবাকে খবর দেয়। পরে ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম কারাগার থেকে তাঁকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ২১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাকিব মারা যান। তাঁকে আটকের আগে নির্যাতন ও আহত হওয়ার কোনো তথ্য আদালতে উত্থাপন করেনি পুলিশ। 

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমানকে নিয়ে সচেতন মহলে বিতর্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিতর্কিত আচরণের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, কয়েক মাস আগে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার মাল্টিমিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর ভাষণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এই ঘটনার পর তাঁকে বায়েজিদ বোস্তামী থানা থেকে আকবরশাহ থানায় বদলি করা হয়। তবে আকবরশাহ থানায় যোগদানের পর তাঁর বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, ওসি এখন থানায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের কথায় চলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button