ইসলাম ধর্মবিশ্লেষণ

ভাইরাল পোস্টে কুরআনের নামে ভুল তথ্য: সত্যতা যাচাই ও সতর্কতা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি ‘পবিত্র কুরআনের চারটি মোটিভেশনাল শব্দ’ শিরোনামে একটি পোস্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিবাচক বার্তা থাকায় বহু মানুষ কোনো প্রকার যাচাই ছাড়াই এটি শেয়ার করছেন। তবে ইসলামিক স্কলার এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোস্টটিতে সঠিক তথ্যের সঙ্গে কিছু ভুল তথ্যও রয়েছে, যা যাচাই না করে প্রচার করা অনুচিত।

প্রচলিত ভাইরাল পোস্টটি:

”পবিত্র কুরআনের চারটি মোটিভেশনাল শব্দ, খুবই উপকারী ছোট্ট হলেও ব্যাপক অর্থবোধক।♥♦”লা তাহযান”অর্থ: অতীত নিয়ে কখনেও হতাশ হবেন না।♦”লা তাখাফ”অর্থ: ভবিষ্যৎ নিয়ে কখনেও দুশ্চিন্তা করবেন না। তা ন্যস্ত করে দিতে হবে আল্লাহর কাছে।♦”লা তাগদাব”অর্থ: জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময় অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সম্মুখীন হতে হবে। রাগ করবেন না।♦”লা তাসখাত”অর্থ: আল্লাহর কোনো ফয়সালার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না।”

বিশ্লেষণ ও সঠিক তথ্য:

বিশেষজ্ঞদের মতে, পোস্টটিতে উল্লেখিত চারটি শব্দের মধ্যে প্রথম দুটি পবিত্র কুরআনে একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু শেষ দুটি শব্দ কুরআনে পাওয়া যায় না।

  • ‘লা তাহযান’ (لَا تَحْزَنْ): এর অর্থ ‘দুঃখ করো না’ বা ‘বিষণ্ণ হয়ো না’। এই শব্দটি কুরআনের একাধিক স্থানে এসেছে। যেমন, সূরা আত-তাওবার ৪০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا” অর্থাৎ, “বিষণ্ণ হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।” একইভাবে সূরা নাহলের ১২৭ নং আয়াতেও এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। তবে ভাইরাল পোস্টে এর অর্থ “অতীত নিয়ে হতাশ হবেন না” বলা হয়েছে, যা পুরোপুরি সঠিক নয়। এর যথার্থ অর্থ হলো— দুঃখ বা বিষণ্ণ না হওয়া।
  • ‘লা তাখাফ’ (لَا تَخَفْ): এর অর্থ ‘ভয় পেয়ো না’ বা ‘আতঙ্কিত হয়ো না’। এটিও কুরআনের আয়াত। যেমন, সূরা হুদের ৭০ নং আয়াতে ফেরেশতারা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে বলেছিলেন, “قَالُوا لَا تَخَفْ” অর্থাৎ, “তারা বলল, ভয় পাবেন না।”
  • ‘লা তাগদাব’ (لَا تَغْضَبْ): এর অর্থ ‘রাগ করো না’। এই শব্দটি কুরআনে পাওয়া যায় না, তবে এটি একটি সহিহ হাদিসের অংশ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি Nabi (ﷺ) এর কাছে উপদেশ চাইলে তিনি বলেন, “لَا تَغْضَبْ” (রাগ করো না)। লোকটি কয়েকবার একই অনুরোধ করলে, প্রতিবারই তিনি একই উত্তর দেন। (সহিহ বুখারি)
  • ‘লা তাসখাত’ (لَا تَسْخَطْ): এর অর্থ ‘অসন্তুষ্ট হয়ো না’। এই শব্দটি কুরআন বা হাদিসের কোনো নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এর অর্থ ইসলামি আকিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সতর্কতা ও করণীয়:

ধর্মীয় বিষয়ে, বিশেষ করে কুরআন ও হাদিসের নামে কোনো তথ্য প্রচারের আগে তার সত্যতা যাচাই করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর নামে অসত্য বা ভুল তথ্য প্রচার করা মারাত্মক গুনাহের কাজ।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“তার চেয়ে বড় জালিম আর কে, যে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামই কি কাফিরদের আবাস নয়?” (সূরা আনকাবুত: ৬৮)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।” (সহিহ বুখারি)

অতএব, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় কোনো পোস্ট শেয়ার করার আগে বিজ্ঞ আলেমদের থেকে এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত। ইসলাম প্রচারের সদিচ্ছা থাকলেও অনিচ্ছাকৃত ভুল মারাত্মক পরিণতির কারণ হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button