ইসলাম ধর্ম

কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা: ফলপ্রসূ দু’আ করার ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

আল্লাহর কাছে চাওয়ার আগে প্রস্তুতি ও চাওয়ার ক্ষেত্রে উম্মাহর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিন।

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে দু’আ হলো ইবাদতের মূল নির্যাস এবং বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে সরাসরি সংযোগের মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন: “তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।” (সুরা আল মু’মিন – ৬৩)। দু’আ করার সময় কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করলে তা আল্লাহর দরবারে দ্রুত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। নিম্নে দু’আ করার কার্যকর ও ইসলামসম্মত ১৩টি ধাপ তুলে ধরা হলো:

দু’আ শুরু করার পূর্বে এই আমলগুলো সম্পন্ন করা উত্তম:

  • দরুদ শরীফ পাঠ করুন।
  • সূরা ফাতিহার প্রথম তিনটি আয়াত পড়ুন।
  • সূরা বাকারা’র শেষ দুটি আয়াত পাঠ করুন।

১. অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা (শোকর আদায়):
সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌র কাছে শোকর ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করুন, “হে আল্লাহ! আপনার কাছে অসংখ্য শোকর, আপনি আমাকে দু’আ করার তাওফিক দিয়েছেন।”

২. তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার):
নিজের ভুল ও গুনাহর জন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত হোন। জেনে-বুঝে বা ভুলবশত করা সমস্ত পাপের জন্য ক্ষমা চান। প্রকাশ্য বা গোপন, অতীতের সব ভুলের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে মাফ চান।

৩. ‘নূর’ বা আলোর জন্য প্রার্থনা:
আল্লাহ্‌র কাছে আপনার জীবনের সব ক্ষেত্রে নূর বা আলো চান: “হে রব, আমার অন্তরে নূর দিন, চোখে নূর দিন, জিহ্বায় নূর দিন, হাতে নূর দিন, পায়ে নূর দিন, শরীরে নূর দিন, সামনে, পিছনে, ডানে, বামে নূর দিন।” (যাকে আল্লাহ্‌ নূর দেন, সে দ্বীন থেকে কখনও পথভ্রষ্ট হয় না।)

৪. বদ-গুণ থেকে আশ্রয় (পানাহ):
নফসের রোগ, যেমন—অহংকার, হিংসা, লোভ, গীবত, অপবাদ, পরনিন্দা—এসব থেকে পানাহ চান। অতিরিক্ত ঘুম, বেশি খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি খারাপ অভ্যাস থেকেও সুরক্ষা চান।

৫. হারামাইন শরীফাইনে যাওয়ার আকুতি:
হৃদয়কে নরম করে বলুন: “হে আল্লাহ! আপনার ‘কুন’ (হও) নির্দেশেই সব সম্ভব। আমাকে মদিনায় নিয়ে যান, রাসূল ﷺ-এর রওজার সামনে দাঁড়ানোর তাওফিক দিন, আপনার পবিত্র ঘর ধরে দু’আ করার সৌভাগ্য দিন।”

৬. পরিবার, প্রিয়জন ও অন্যদের জন্য দু’আ:
নিজের জন্য চাওয়ার আগে বাবা-মা, পূর্বপুরুষ, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং যারা আপনার কাছে দু’আ চেয়েছেন, তাদের জন্য দু’আ করুন। অসুস্থদের আরোগ্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্তি এবং নওমুসলিম ভাই-বোনদের জন্য হিদায়াহ প্রার্থনা করুন। মনে রাখবেন, অন্যের জন্য দু’আ করলে নিজের দু’আ দ্রুত কবুল হয়।

৭. উম্মাহ’র জন্য দু’আ ও মজলুমের পক্ষে আরজি:
মুসলিম উম্মাহর জন্য দু’আ করুন। গাজাসহ বিশ্বের সকল মজলুমের জন্য সাহায্য ও শান্তি কামনা করুন। প্রার্থনা করুন, “আমাদের সন্তানদের উমর (রা.)-এর মতো বীর ও ঈমানদার বানিয়ে দিন।”

৮. ফিতনা থেকে রক্ষা ও সুন্দর মৃত্যু:
দুনিয়ার ও মৃত্যুর সময়ের সকল ফিতনা থেকে আশ্রয় চান। আল্লাহর কাছে ঈমানী অবস্থায় সুন্দর মৃত্যু চান এবং জান্নাতে সবুজ পাখিদের দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আরজি পেশ করুন।

৯. রমাদান সংশ্লিষ্ট দু’আ:
রমাদান শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রথম ছয় মাস রমাদানের আমলগুলো কবুল করে নেওয়ার জন্য বলুন এবং রমাদানে ঘটে যাওয়া ত্রুটিগুলো মাফ করে দিতে বলুন। পরবর্তী ছয় মাস জীবনের সেরা রমাদান যেন আসে, সেই প্রার্থনা করুন।

১০. বিবাহিত জীবনের জন্য দু’আ (স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান):
স্বামী/স্ত্রীর জন্য নেক হায়াত, সুস্থতা, বরকতময় রিযিক, তাকওয়া এবং দুনিয়া-আখিরাতে সফলতা চান। বিশেষভাবে আপনার সঙ্গীর চোখে আপনাকে অধিক প্রেমময়ী করে দিতে বলুন। সন্তান চাইলে নেককার, পবিত্র, বরকতময়, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সুন্দর ও চক্ষুশীতলকারী সন্তান প্রার্থনা করুন।

১১. দুনিয়ার কল্যাণ:
আল্লাহ্‌র কাছে প্রশস্ত, শান্তিময়, ফিতনাহীন, বাগানসম বাড়ি চান। রিজিকে বরকত, বদনজর ও হিংসা থেকে নিরাপত্তা চান। বলুন: “হে আল্লাহ! আপনি যাদের ভালোবাসেন, আমাকে তাদের মাঝে কবুল করুন।”

১২. কুরআনের আখলাক:
আপনার পুরো জীবন পবিত্র কুরআনের আলোয় সাজিয়ে দিতে আল্লাহ্‌র কাছে একান্তভাবে প্রার্থনা করুন।

১৩. মানুষকে মাফ করা:
যারা আপনাকে কষ্ট দিয়েছে, আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য তাদের মাফ করে দিন। আল্লাহ্‌র কাছে বলুন: “হে আল্লাহ! আমি তাদের যেভাবে মাফ করেছি, আপনিও আমাকে মানুষের কাছে তেমনভাবে মাফ করিয়ে দিন।”

দু’আর মাঝে আল্লাহ্‌র সুন্দর নামগুলো ধরে বেশি বেশি ডাকুন: ইয়া রহমান, ইয়া রহিম, ইয়া ওয়াহাব, ইয়া গফ্ফার, ইয়া রজজাক, ইয়া যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম।

আরবিতে জানা সুন্নাহসম্মত দু’আগুলো পাঠ করুন। প্রতিদিন মিনিমাম ১০০০ বার দরুদ এবং অন্তত ১০০ বার লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ পাঠের চেষ্টা করুন।

মনে রাখবেন:

  • “আল্লাহ আমার প্রতিটি কথা মনোযোগ সহকারে শুনছেন। তাঁর কাছে আমার প্রতিটি আবদারই মূল্যবান।”
  • “আমি দু’আ করি, কিন্তু কবুল হচ্ছে না”—এই ধরনের কথা কখনও বলবেন না। যতক্ষণ আপনি আশা রাখবেন, দু’আর দরজা খোলা থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button