বিশ্লেষণসংগৃহীত সংবাদস্বাস্থ্য

কিডনি রোগের পথ্য ব্যবস্থাপনা: যা খাবেন ও যা খাবেন না

প্রোটিন, পটাশিয়াম ও ক্রিয়েটিনিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীর খাদ্যতালিকা কেমন হওয়া উচিত

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: কিডনি রোগীরা সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে রোগের তীব্রতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি রোগীর রোগের প্রকার, ধাপ, ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে কি না, ডায়াবেটিস, শারীরিক পরিশ্রম এবং রক্ত পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পথ্য তালিকা ভিন্ন হতে পারে। পুষ্টিবিদ এস এন সম্পা (সমরিতা হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা) কিডনি রোগীদের জন্য অনুসরণীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যতালিকা ও পরামর্শ দিয়েছেন।

রক্তে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৫৩-১২৩ মাইক্রোমোল/লিটার। এই পরিমাপের বেশি হলে রোগীকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এবং স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে। প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে:

রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাপপ্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ (আনুমানিক)
৩০০ মাইক্রোমোল/লিটার৩০ গ্রাম প্রোটিন
২৫০-৬০০ মাইক্রোমোল/লিটার৪০ গ্রাম প্রোটিন
১৪০-২৫০ মাইক্রোমোল/লিটার৫০ গ্রাম প্রোটিন
  • প্রাণিজ প্রোটিন (প্রথম শ্রেণির প্রোটিন): মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম সীমিত পরিমাণে খেতে হবে।
  • উদ্ভিজ প্রোটিন (দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন): ডাল, মটরশুঁটি, শিমের বিচি এবং যেকোনো ধরনের বিচি বা রেনাল ডায়েট-এ একেবারেই বর্জন করতে হবে।

কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা (স্বাভাবিক: ৩.৫-৫.২ সড়ষ/ষ) বাড়ার প্রবণতা থাকে। তাই কম পটাশিয়ামযুক্ত সবজি বেছে নেওয়া জরুরি।

যে সকল সবজি বর্জনীয়:
ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ঢ্যাঁড়শ, শিম, বরবটি, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কচু, মূলা এবং পালং, পুঁই ও মূলা শাক খাওয়া যাবে না।

যে সকল সবজি খাওয়া যাবে:
লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ডাটা, করলা, পটল, পেঁপে, ধুন্দল, শশা (বিচি ছাড়া), সজনে ইত্যাদি। শাকের মধ্যে ডাটা শাক, লাল শাক, কলমি শাক, হেলেঞ্চা শাক ও কচু শাক খাওয়া যেতে পারে।

পটাশিয়াম কমানোর বিশেষ পদ্ধতি:
সবজির পটাশিয়ামের মাত্রা কমানোর জন্য:

  • সবজি রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • ভারি ও বড় করে কাটুন।
  • প্রথমে সবজি সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিন, তারপর পুনরায় রান্না করুন।

ফল: রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে খাদ্যতালিকায় কোনো ফল রাখা যাবে না। পটাশিয়াম স্বাভাবিকের মধ্যে থাকলেও কিডনি রোগীরা শুধুমাত্র কম পটাশিয়ামযুক্ত ফল, যেমন—আপেল, পেয়ারা, পাকা পেঁপে, ও নাশপাতি বেছে নিতে পারেন।

পথ্য বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা কিডনি রোগ নিরাময় করবে না, তবে এটি রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এতে রোগী যন্ত্রণার পরিবর্তে স্বস্তি অনুভব করতে পারেন। পথ্য নির্ধারণের জন্য অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button