
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া ভূমি অফিস এখন ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম আর গ্রাহক হয়রানির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকারি ভূমি ব্যক্তি মালিকানায় নামজারি থেকে শুরু করে সাধারণ সব সেবার ক্ষেত্রেই অর্থ ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন এবং অফিসের পিয়ন হেলাল একটি শক্তিশালী দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন, যাদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ জিম্মি।
ভুক্তভোগীরা জানান, নিলুফা ইয়াসমিনের অনুমোদন ছাড়া অফিসে কোনো ফাইল নড়ে না। সরকারি জমি অবৈধভাবে ব্যক্তির নামে নামজারি করা, কৃষিজমিতে বালু ভরাটের অনুমতি দেওয়া সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের জন্য প্রকাশ্যেই ঘুষ নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগকারীরা জেলা প্রশাসকের কাছে বারবার লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি; উল্টো তাদেরকেই হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে যে, নিলুফা ইয়াসমিনের ছত্রছায়ায় পরিচালিত দালাল চক্রের প্রভাবে উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিক অর্থের বিনিময়ে ক্রয়োত্তর অনুমতি না পাওয়া জমিরও নামজারি রিপোর্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি সরকারি ছুটির দিনেও ঘুষের বিনিময়ে বালু ভরাটের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে নিলুফা ইয়াসমিনের ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ ঘটনাকে দুর্নীতির একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
খুলনা শহরের পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার ৭০ বছর বয়সী বাসিন্দা এস এম সাঈদ হোসেন জানান, তিনি নিজের জমির খাজনা দিতে গিয়ে তিন দিন ঘুরেও সেবা পাননি, কারণ তিনি ঘুষ দিতে রাজি হননি। এই বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককেও অবহিত করেছেন।
এছাড়াও, থুকড়া রোডের একটি দোকানঘর নিয়ে সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান এবং নিলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দোকান মালিক সান্টু বিশ্বাস অভিযোগ করেন, দোকান খালি না করলে বা পাঁচ লাখ টাকা না দিলে সমস্যা তৈরি হবে বলে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিস দোকানঘরটি সিলগালা করে দেয়। অভিযোগ রয়েছে, উভয় পক্ষকে না ডেকে কিংবা কোনো প্রকার শুনানি ছাড়াই কেবল মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ভাড়াটিয়া জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলেও এক মাসেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ভূমি অফিস সূত্র জানায়, নিলুফা ইয়াসমিনকে একবার সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর তাকে কয়রা উপজেলার বেদকাশী তহশিল অফিসে বদলি করা হলেও অভিযোগ রয়েছে, সেখানেও তিনি নিয়মিত অফিস না করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম চালিয়ে গেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “আমার অফিসে কোনো ঘুষ নেওয়া হয় না।”
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, “থুকড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে আমরা অবগত আছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এখনও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি, তবে তদন্ত কার্যক্রম চলমান। নতুন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি পুনরায় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কারও প্রতি অবিচার হয়ে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



