জাতীয়প্রশাসনবাংলাদেশসংগৃহীত সংবাদ

দুদক অধ্যাদেশ অনুমোদন: কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়ায় টিআইবির তীব্র উদ্বেগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হওয়ার পর গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই খসড়ায় দুদক সংস্কার কমিশনের দেওয়া ‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশমালা’ বাদ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি অবিলম্বে কমিশনের প্রণীত প্রতিবেদনের সুপারিশের সঠিক প্রতিফলন নিশ্চিত করে নতুন দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত করার জোর দাবি জানিয়েছে।

এই উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, যিনি নিজেও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন, মন্তব্য করেন, “খসড়া অধ্যাদেশটি বিদ্যমান আইনের চেয়ে কিছুটা উন্নত সংস্করণ এবং এতে কমিশনের কোনো কোনো সুপারিশের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ খসড়ায় বাদ দেওয়া বা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, যা হতাশাজনক।”

ড. ইফতেখারুজ্জামান উল্লেখ করেন যে, কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছতা ও কমিশনের দায়িত্ব পালনে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংস্কার কমিশন ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেছিল। তাঁর ভাষ্যমতে, “দুদকের দায়িত্ব পালনে সাফল্য-ব্যর্থতার ষাণ্মাসিক পর্যালোচনার সুপারিশটি (পর্যালোচনা অংশ) সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে।” তিনি কঠোরভাবে বলেন, “অর্থাৎ, যে কারণে জন্মলগ্ন থেকে দুদক ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষের হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, সরকার সে অবস্থার পরিবর্তন চাইছে না।”

নির্বাহী পরিচালক আরও জানান, চেয়ারম্যান ও কমিশনার বাছাই কমিটিতে সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা বিঘ্নিত করা হয়েছে।

  • সংসদীয় বিরোধী দলের প্রতিনিধি মনোনয়নের ক্ষমতা বিরোধী দলের নেতার বদলে অযাচিতভাবে স্পিকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। তিনি একে ‘বাস্তবে সরকারি দলের প্রভাব জোরদার করার অশুভ প্রয়াস’ বলে অভিহিত করেন।
  • একইসাথে, দুর্নীতিবিরোধী কাজে অভিজ্ঞ একজন নাগরিককে কমিটিতে সদস্য করার দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির বদলে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
  • এছাড়া, প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত নামের তালিকা প্রকাশের প্রস্তাবিত বিধানটিও বাতিল করে সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

টিআইবি প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুসারে, কমিশনের কাজে গতিশীলতা আনতে কমিশনার পদে আইন, শিক্ষা, প্রশাসন, বিচারসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশে তা অযৌক্তিকভাবে ২৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, কমিশনারের সংখ্যা তিনজন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন করার প্রস্তাবও উপেক্ষা করা হয়েছে, যা দুঃখজনক।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন তুলেছেন, বাদ দেওয়া এসব সুপারিশ প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেয়েছিল, যা সরকার ও দুদকের অজানা নয়। তারপরও এসব ইচ্ছামতো বাতিল করা হচ্ছে। তাঁর মতে, এর কারণ সম্ভবত ‘সরকার ও এমনকি দুদকের ভেতরে কিছু স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের ভিন্নমত পোষণ, যারা দুদকের অকার্যকরতার ফলে লাভবান হওয়ার সুযোগ অব্যাহত রাখতে চায়।’

তিনি জোর দিয়ে প্রশ্ন করেন, সরকার নিজেই সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং জাতীয় ঐকমত্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তারপরও যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো কোন যুক্তিতে সরকার বা দুদক অবমূল্যায়ন বা ধামাচাপা দিতে পারে? তিনি বিষয়টিকে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বে থাকা সরকারের জন্য ‘হতাশাজনক, স্ববিরোধী ও সংস্কার পরিপন্থী নজির’ আখ্যা দেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button