ইসলামী দাওয়াত ও তালিম: মহিলাদের দূরবর্তী সফরের বিধান কী?
ধর্মীয় ডেস্ক: মহিলাদের জন্য দাওয়াত ও তালিমের কাজ করা এবং এই উদ্দেশ্যে নিজের বাড়ি ছেড়ে দূরে গমন করার শরয়ী বিধান নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরবের দাঈ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ফতোয়া অনুযায়ী, পুরুষ-নারী সবার জন্যই দাওয়াতের কাজ করা ফরজ, তবে তা সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী। একজন নারীর দাওয়াতের সর্বোত্তম ক্ষেত্র হলো তাঁর নিজের পরিবার, স্বামী ও সন্তান-সন্ততি। স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন, ঘর গোছানো, সম্পদ হেফাজত এবং সন্তান লালন-পালনই তাঁর প্রধানতম দায়িত্ব। এই প্রধান দায়িত্বগুলো ফেলে রেখে দূর-দূরান্তে গিয়ে দাওয়াতের কাজ করা ইসলামের নির্দেশ নয়।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমাদানের সিয়াম পালন করে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে (মিশকাত, হা/৩২৫৪)। তবে শর্ত হলো, শিরক-বিদ’আত মুক্ত আমল এবং মানুষের হক নষ্ট না করা।
উত্তরদাতা বলেছেন, উপরিউক্ত প্রধান দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালনের পর যদি কোনো মহিলা স্বামী বা মাহরাম পুরুষকে সহগামী করে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য দূরে কোথাও গমন করেন, তবে তাতে অসুবিধা নেই।
তবে কোনো মহিলা নিজ বাড়িতেও দীনী তালিমের মজলিশ করতে পারেন, যেখানে প্রতিবেশী মহিলারা অংশ নেবেন। অথবা স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি সাপেক্ষে আশেপাশে অন্য কোথাও তালিমি বৈঠক করা যেতে পারে, যদি তাতে নিজ গৃহস্থালির দায়িত্বে ব্যাঘাত না ঘটে এবং ফেতনা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ফতোয়াতে বর্তমান সমাজের একটি প্রবণতার সমালোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে কিছু মহিলা স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া একত্রে কয়েকজন মিলে ইসলামী সংগঠনের নামে এক জেলা থেকে আরেক জেলা ছুটে বেড়াচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা স্বামীর অনুমতিরও প্রয়োজন মনে করেন না, অথবা চাপ দিয়ে অনুমতি নিতে বাধ্য করেন—যা শরীয়ত অনুমোদন করে না।
দাওয়াতি কাজে আগ্রহী মহিলাদের প্রতি নির্দেশ হলো, তাঁরা যেন নিজ পরিবার ও স্বামীর প্রতি অধিক যত্নশীল হন। তারপর সাধ্য অনুযায়ী দাওয়াতি কাজ করেন। বর্তমান যুগে ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানাভাবে দাওয়াতি কাজের সুযোগ রয়েছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। দূরে কোথাও যেতে হলে (যদিও সফরের দূরত্ব না হয়) অবশ্যই স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সাথে যেতে হবে এবং ফেতনা থেকে দূরে থাকতে হবে।
ফতোয়ার শেষাংশে বলা হয়েছে, তালিম বা দাওয়াতের পূর্বে একজন নারী বা পুরুষের জন্য সঠিক জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক। জ্ঞান ছাড়া তালিম বা দাওয়াত মানুষকে পথভ্রষ্ট করার শামিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, “(হে নবী) আপনি বলে দিন: এই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীরা আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই সুস্পষ্ট জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে।” (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।
ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর বক্তব্যের সূত্র ধরে বলা হয়েছে যে, কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞানার্জন করা অত্যাবশ্যক। ইলমবিহীন দাওয়াত যেমন নিজের পথভ্রষ্টতার কারণ, তেমনি অন্যদেরও। তাই সঠিক জ্ঞান না থাকলে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের অনুমতি থাকলেও দূর-দূরান্তে গিয়ে দাওয়াতের কাজ করা বৈধ হবে না।



