কৃষিবার্তাবাংলাদেশবিশ্লেষণ

মাত্র ৭৫ দিনে গরু মোটাতাজাকরণ: বিজ্ঞানসম্মত খাদ্য ও পরিচর্যার সাপ্তাহিক রুটিন

কৃষি ও গবাদিপশু ডেস্ক: কম সময়ে গবাদি পশুর ওজন বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য বিজ্ঞানসম্মত মোটাতাজাকরণ (Fattening) পদ্ধতি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। এই পদ্ধতিতে সাধারণত ৭৫ দিনের একটি সুনির্দিষ্ট খাদ্য ও পরিচর্যার তালিকা অনুসরণ করা হয়। নিয়মিত এই শিডিউল মেনে চললে গরু সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত অতিরিক্ত ওজন লাভ করতে পারে এবং ঝরঝরে ও সতেজ দেখায়। গবাদি পশুর সুস্বাস্থ্য ও দ্রুত ওজন বৃদ্ধির জন্য নিচে ৭৫ দিনের একটি কার্যকর রুটিন তুলে ধরা হলো।

সপ্তাহ (দিন)দৈনিক খাদ্য তালিকা (পরিমাণ)ওষুধ/বিশেষ পরিচর্যা
১ম (১ম – ৭ম দিন)ঘাস ১০-১২ কেজি, খড় ২ কেজি, দানাদার ১ কেজি, লবণ ৩০ গ্রাম, পানি ৩০-৪০ লিটার।শুরুতে কৃমিনাশক (অ্যালবেনডাজল/লেভামিসোল) প্রয়োগ, ভিটামিন টনিক (এডি৩ই/বি-কমপ্লেক্স), প্রোবায়োটিক শুরু।
২য় (৮ম – ১৪শ দিন)ঘাস ১২-১৫ কেজি, খড় ২-৩ কেজি, দানাদার ১.৫ কেজি, লবণ ৩০ গ্রাম।লিভার টনিক (হেপাটোকেয়ার), ভিটামিন সিরাপ, প্রোবায়োটিক চলমান।
৩য় (১৫শ – ২১শ দিন)ঘাস ১৫ কেজি, খড় ৩ কেজি, দানাদার ২ কেজি, গুড় ২০০ গ্রাম, লবণ ৪০ গ্রাম।ক্যালসিয়াম সিরাপ (ক্যাল-আপ), মিনারেল মিশ্রণ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যুক্ত করা।
৪র্থ (২২শ – ২৮শ দিন)ঘাস ১৫-১৮ কেজি, খড় ৩ কেজি, দানাদার ২.৫ কেজি, গুড় ২৫০ গ্রাম।প্রোবায়োটিক, ভিটামিন টনিক ও ক্যালসিয়াম সিরাপ নিয়মিত দিতে হবে।
৫ম (২৯শ – ৩৫শ দিন)ঘাস ১৮ কেজি, খড় ৩-৪ কেজি, দানাদার ৩ কেজি, গুড় ৩০০ গ্রাম।লিভার টনিক, মিনারেল মিশ্রণ, ভিটামিন সিরাপ।
৬ষ্ঠ (৩৬শ – ৪২শ দিন)ঘাস ১৮-২০ কেজি, খড় ৩-৪ কেজি, দানাদার ৩.৫ কেজি, লবণ ৪০ গ্রাম।ভিটামিন এডি৩ই ও ক্যালসিয়াম সিরাপ প্রদান।
৭ম (৪৩শ – ৪৯শ দিন)ঘাস ২০ কেজি, খড় ৪ কেজি, দানাদার ৪ কেজি, গুড় ৪০০ গ্রাম।প্রোবায়োটিক, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং মিনারেল মিশ্রণ চলমান।
৮ম (৫০শ – ৫৬শ দিন)ঘাস ২০ কেজি, খড় ৪ কেজি, দানাদার ৪.৫ কেজি, লবণ ৫০ গ্রাম।ক্যালসিয়াম ও লিভার টনিকের সাথে ভিটামিন সিরাপ দিতে হবে।
৯ম (৫৭শ – ৬৩শ দিন)ঘাস ২০ কেজি, খড় ৪ কেজি, দানাদার ৪.৫–৫ কেজি, গুড় ৫০০ গ্রাম।প্রোবায়োটিক ও মিনারেল মিশ্রণ।
১০ম (৬৪শ – ৭০শ দিন)ঘাস ২০-২২ কেজি, খড় ৪ কেজি, দানাদার ৫ কেজি।ভিটামিন টনিক, ক্যালসিয়াম সিরাপ, লিভার টনিক।
শেষ পর্ব (৭১শ – ৭৫শ দিন)ঘাস ২০-২২ কেজি, খড় ৪ কেজি, দানাদার ৫ কেজি ও গুড় ৫০০ গ্রাম।ফ্যাটেনিং বুস্টার (যেমন: গ্রোম্যাক্স/পাওয়ারফেট), প্রোবায়োটিক এবং মিনারেল মিশ্রণ চালু রাখতে হবে।

গরু মোটাতাজাকরণের বিশেষ টিপস

সঠিক খাদ্য তালিকার পাশাপাশি বিশেষ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি যত্নশীল থাকা জরুরি:

  1. খাদ্য বৃদ্ধি: দানাদার খাদ্য হঠাৎ করে না বাড়িয়ে প্রতি সপ্তাহে ধীরে ধীরে এবং সুষমভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।
  2. পরিষ্কার পানি: গরুকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে (কমপক্ষে ৪০–৫০ লিটার) পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করতে হবে।
  3. খামারের পরিবেশ: খামার বা গোশালাকে সবসময় শুকনো, পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর রাখতে হবে।
  4. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: গ্রীষ্মকালে গরুর জন্য ছায়াযুক্ত ও শীতল জায়গার ব্যবস্থা করা এবং শীতকালে কম্বল বা কৃত্রিম তাপের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।
  5. চিকিৎসকের পরামর্শ: রুটিনে উল্লিখিত ওষুধ ও টনিক ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন নিবন্ধিত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button