টাক মাথা কোনো ত্রুটি নয়, বরং নেতৃত্বের নিদর্শন!
ডেস্ক রিপোর্ট: টাক পড়া বা চুল কমে যাওয়া একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার কারণে কিংবা অন্য কোনো রোগ বা কারণে হতে পারে। তবে এই স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্বকে বিন্দুমাত্র কমিয়ে দেয় না। ইসলামের ইতিহাসে এবং আরব সংস্কৃতিতে টাক মাথার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক।
প্রাচীন আরববাসীরা টাককে নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। তাদের একজন কবি এই ধারণাকে তুলে ধরেছেন এভাবে:
“বনী লানা আল-মাজদু আবা’উন লানা সালাফু সল’উ আর-রু’উসি ওয়া সীমা আস-সাআদাতি আস-সল’উ” (আমাদের টাক মাথার পূর্বপুরুষেরা আমাদের জন্য গৌরব ও মহিমা প্রতিষ্ঠা করেছেন। টাক পড়া ছিল সম্মানিত নেতাদের নিদর্শন)।
ইতিহাস, জীবনী গ্রন্থ এবং জীবনচরিতসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের অনেকেই ছিলেন টাক মাথার অধিকারী। অথচ তাঁরা ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ইসলামের প্রথম সারির ইমাম। টাক মাথা ছিল এমন বিশিষ্ট সাহাবীদের মধ্যে রয়েছেন:
১. উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.): তাঁর টাকের পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি।
২. আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.): তাঁর সুযোগ্য পুত্র।
৩. উসমান ইবনে আফফান (রা.): ইসলামের তৃতীয় খলিফা।
৪. আলি ইবনে আবি তালিব (রা.): ইসলামের চতুর্থ খলিফা।
৫. আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)।
৬. মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (রা.)।
৭. আল আহনাফ ইবনে কায়েস (রা.) এবং আরও অনেক সাহাবী।
সাহাবীদের মতো বিশিষ্ট তাবেয়িদের মধ্যেও অনেকে ছিলেন টাক মাথার অধিকারী। তাবে তাবেয়ি এবং হেদায়েতের অন্যান্য ইমামগণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ:
- ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রাহ.): তাঁর জীবনীর বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি ছিলেন দীর্ঘদেহী, বিশাল মস্তকবিশিষ্ট এবং টাক মাথার অধিকারী। তাঁর মাথা ও দাড়িতে শুভ্র কেশ ছিল।
এই মহান ব্যক্তিত্বরা তাঁদের টাককে কোনো ত্রুটি বা শারীরিক দোষ হিসেবে গণ্য করতেন না। এমনকি টাক বলে কাউকে সম্বোধন করাও সে সময়ে অপমান বা হেয় করা মনে করা হতো না।
বড় মাপের তাবেয়ি যির ইবনে হুবাইশ (রাহ.)-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলা যায়: তিনি প্রখ্যাত সাহাবি হুযাইফা (রাহ.)-এর কাছে গেলেন। হুযাইফা (রাহ.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: “হে টাক মাথা, তুমি কার লোক?” তিনি জবাব দিলেন: “আমি যির ইবনে হুবাইশ।” এটি প্রমাণ করে, ‘টাক মাথা’ ডাকটি উপহাসের অর্থে ব্যবহৃত হতো না।
অন্য একটি হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সারজিস (রা.) থেকে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: আমি টাক মাথার ব্যক্তিকে অর্থাৎ উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করতে দেখেছি। তখন তিনি বলছিলেন: “আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে চুম্বন করছি যদিও আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র—যা কোনো ক্ষতিও করতে পারে না, কোনো উপকারও করতে পারে না। যদি আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।” [সহীহ মুসলিম]
সুতরাং, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে টাক পড়া বা মাথায় চুল কম থাকা কোনোভাবেই ব্যক্তির মান-মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্বের পথে বাধা নয়, বরং ইতিহাসের পাতায় অনেক সম্মানিত ব্যক্তিত্বের মধ্যেই এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল।



