অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাদুর্নীতিদেশপ্রতারনাপ্রশাসনবাংলাদেশসংগৃহীত সংবাদসম্পাদকীয়

রাজউকের পরিদর্শক আল নাঈম মুরাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর জোন ৭/১–এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমারত পরিদর্শক আল নাঈম মুরাদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া ও শ্যামপুর থানাধীন বিভিন্ন এলাকার ভবন নির্মাণকারী মালিক ও ডেভেলপার কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে তার অবৈধ অর্থবাণিজ্য ও অনিয়মের কারণে কার্যত জিম্মি হয়ে আছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পরিদর্শক আল নাঈম মুরাদ নির্মাণাধীন ভবনে পরিদর্শনে গিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে নানা ত্রুটি দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে কাজ শুরু করার বিনিময়ে তিনি সরাসরি অথবা মধ্যস্থতাকারী দালালের মাধ্যমে ভবন মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

‘দৈনিক সকালের সময়’-এর অনুসন্ধানে প্রমাণসহ এসব তথ্য উঠে এসেছে যে, পুরান ঢাকায় রাজউকের ভবন নির্মাণ নীতিমালাকে উপেক্ষা করে চলছে ব্যাপক ডেভিয়েশন (নকশা পরিবর্তন), রাস্তার প্রশস্ততা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ লঙ্ঘন, ইনডোর-আউটডোর অবকাঠামো পরিবর্তন এবং আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের মতো অসংখ্য অনিয়ম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার অনুমোদন ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে রাজউক নোটিশ জারি করলেও, রহস্যজনক লেনদেনের মাধ্যমে সেসব নোটিশ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে বেশ কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। যেমন:

  • ৩৩/১৩/এ, সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া: মো: লুৎফর রহমান গং (অবসরপ্রাপ্ত রেল মাস্টার) রাজউক থেকে বৈধ কোনো প্ল্যান অনুমোদন না নিয়েই শুধুমাত্র ‘ছাড়পত্র’-এর ওপর ভিত্তি করে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তৃতীয় তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইমারত নির্মাণ আইন ১৯৫২ (সংশোধিত) এর ৩(খ) ধারার শর্ত অনুসারে জমির পরিমাণের অন্তত ৪০% খোলা জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক হলেও, তা মানা হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণস্থলে বাধ্যতামূলক সাইনবোর্ড ও নিরাপত্তা নেটও ব্যবহার করা হয়নি, যা শ্রমিক ও জনসাধারণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
  • ৩০/কে, হাজী আব্দুল কাদের মোল্লা টাওয়ার, সতিশ সরকার রোড: সাফা প্রোপারটিজ নামক একটি ডেভেলপার কোম্পানি ৬ ফুট রাস্তার ওপরে বহুতল নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে।
  • ৮৮/এ/২ ডিস্টিলারি রোড, গেন্ডারিয়া: মো. আকবর হোসেন (এল.এইচ প্রোপারটিজ লিমিটেড) কর্তৃক ৬ ফুট রাস্তায় ৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলমান। এখানেও রাজউকের কোনো অনুমোদিত প্ল্যান নেই, শুধু ছাড়পত্রের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ কাজ চলছে।
  • ৪৬ রজনী চৌধুরী রোড, গেন্ডারিয়া: সরু গলির ভিতরে নিজের খেয়ালখুশি মতো নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ভবন কর্তৃপক্ষ। এখানে রাজউক নির্মাণ আইন মানা হয়নি এবং অনুমোদন বোর্ডের স্থাপনাও সাইটে নেই।
  • এছাড়া ৫০ এস,কে দাস রোড, ব্যাটারি গলি; ২ নং ফরাসগঞ্জ, সূত্রাপুর (নাজিমা গং); হোল্ডিং ৮ নং দ্বিন নাথ সেন রোড (হাজী মনিরুজ্জামান গং) এবং হোল্ডিং ৪৯ মীরহাজীবাগ, শ্যামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশেই পুরান ঢাকায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের অবৈধ বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। এতে নগর পরিকল্পনার চরম ব্যাঘাত ঘটছে এবং সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভবন মালিক ‘দৈনিক সকালের সময়’-কে জানান, তার ভবনে নানান ত্রুটি দেখিয়ে এবং উচ্ছেদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ইমারত পরিদর্শক আল নাঈম মুরাদ ২ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করেন।

এছাড়াও, গত ২৮ আগস্ট ২০২৫ তারিখে গেন্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুরপাড় এলাকায় একটি উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করেও বিভিন্ন ভবন মালিকের কাছ থেকে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন বলে ইমারত পরিদর্শক মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

রাজউক জোন–৭/১ এলাকায় চলমান অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে আল নাঈম মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, উচ্ছেদ হওয়া ভবনগুলোর পুরনো কাঠামোয় পুনর্নির্মাণ ও অনুমোদনবিহীন স্থাপনার বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট জবাব দিতে পারেননি।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাজউকের অভ্যন্তরে এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম শুধু রাজধানীর উন্নয়নকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রাখছে। ভবিষ্যতে এসব অনিয়ম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে নগর উন্নয়ন আরও জটিল হবে।

Source: দৈনিক সকালের সময়_

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button