অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: ওটিপি বা পিন নম্বর ছাড়াই এখন গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিচ্ছে সাইবার প্রতারকেরা। পুরনো কৌশল ছেড়ে নতুন এবং আরও ভয়ঙ্কর পদ্ধতি অবলম্বন করে তারা সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। তাদের পাঠানো বার্তাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যা দেখতে হুবহু ব্যাংকের অফিসিয়াল বার্তার মতো। গ্রাহক অসতর্কতাবশত সেই বার্তার লিংকে একবার ক্লিক করলেই মোবাইল থেকে ব্যাংক সংক্রান্ত যাবতীয় সংবেদনশীল তথ্য চলে যাচ্ছে প্রতারকের হাতে, যার ফলে খুব সহজেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
সাইবার অপরাধীরা সাধারণত যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে এই ধরনের জালিয়াতি করে থাকে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ফিশিং লিংক: তারা ব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে। গ্রাহক যেকোনো কারণে সেই লিংকে ক্লিক করলে তার ব্যক্তিগত তথ্য সরাসরি পাচার হয়ে যায় প্রতারকদের কাছে।
- কল-মার্জিং: এটি তুলনামূলকভাবে নতুন কৌশল। এক্ষেত্রে চলমান একটি কলের মধ্যেই কৃত্রিমভাবে আরেকটি দ্বিতীয় কল যুক্ত করা হয় এবং সেই কলের আড়ালে গ্রাহকের অজান্তে ওটিপি বা সংকেত নম্বর শুনে নেওয়া হয়।
- ভয়েসমেইল হ্যাক ও স্ক্রিন শেয়ারিং: ব্যবহারকারী অসচেতনভাবে যদি তার স্ক্রিন শেয়ার করে অথবা ভয়েসমেইলে সংবেদনশীল তথ্য (যেমন ওটিপি) রেকর্ড করে রাখেন, তাহলে সেই তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
- কিউআর কোড জালিয়াতি: নকল বা ভুয়া কিউআর কোড তৈরি করে স্ক্যান করার জন্য গ্রাহককে প্রলুব্ধ করা হয়। এই কোড স্ক্যান করা মাত্রই একটি ক্ষতিকারক লিংক চালু হয়ে গ্রাহকের তথ্য ফাঁস করে দেয়।
প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রায় নিরাপদ থাকতে কিছু বিষয় কঠোরভাবে মেনে চলা জরুরি:
১. সতর্কতা: অপরিচিত কোনো কল, মেসেজ বা লিংকে ক্লিক করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকুন।
২. তথ্য সুরক্ষায় কড়াকড়ি: ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর, পাসওয়ার্ড, পিন বা ওটিপি’র মতো কোনো সংবেদনশীল তথ্যই কখনও এসএমএস, কল অথবা কোনো লিংকের মাধ্যমে কারও কাছে দেবেন না। ব্যাংক কখনও এসব তথ্য জানতে চায় না।
৩. যাচাই করুন: কোনো প্রকার সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের অফিসিয়াল হটলাইনে ফোন করে সরাসরি তথ্য যাচাই করুন।
৪. অ্যাপ্লিকেশন সতর্কতা: অজানা বা সন্দেহজনক উৎস থেকে কোনো প্রকার অ্যাপ ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন। অ্যাপ ডাউনলোড করে অনুমতি দিলে তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়ে।
৫. সামাজিক মাধ্যম: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য বা পারিবারিক বিবরণ কম শেয়ার করুন। প্রতারকেরা এই তথ্য ব্যবহার করে কাস্টমাইজড ফিশিং ফাঁদ তৈরি করতে পারে।
যদি আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে অননুমোদিত কোনো লেনদেন হয়ে যায়, তবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো দ্রুত গ্রহণ করতে হবে:
- অবিলম্বে আপনার ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার বিভাগে কল করে বিষয়টি অবহিত করুন।
- দ্রুত আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি ব্লক বা ফ্রিজ করার নির্দেশ দিন।
- মোবাইল থেকে সন্দেহজনক/অপরিচিত সব অ্যাপ মুছে ফেলুন এবং নিরাপত্তা স্ক্যান করুন।
- লেনদেনের প্রমাণ (স্ক্রিনশট, মেসেজ, কল লগ ইত্যাদি) সংগ্রহ করে রাখুন, যা ব্যাংক ও পুলিশকে তদন্তে সহায়তা করবে।
প্রযুক্তির সুফল গ্রহণ করা উচিত, কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষা করাই প্রথম কর্তব্য। মনে রাখবেন, একটি মাত্র ক্লিকের ভুলে আপনার বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন, যেকোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তা যাচাই করুন এবং সন্দেহ হলে নিজে নিশ্চিত হয়ে নিন।



