
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: জেমকন গ্রুপের কর্ণধার এবং যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তার প্রায় একশ একর জমি বাজেয়াপ্ত করা এবং ২২ কোটির অধিক টাকার হিসাব ফ্রিজ করার পাশাপাশি তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ এই গুরুত্বপূর্ণ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ক্রোক ও অবরুদ্ধের নির্দেশ পাওয়া কাজী নাবিল আহমেদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ:
স্থাবর সম্পদ:
- ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার একটি ছয়তলা ভবনসহ ১১ শতাংশ জমি (মূল্য ২ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা)।
- গুলশান মডেল টাউনের একটি ফ্ল্যাট (মূল্য ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬৫ টাকা)।
- ঢাকার মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুরের ১৯৫ দশমিক ২১ শতাংশ জমি (মূল্য ৬৭ লাখ টাকা)।
- যশোরের কেশবপুরের ৬ দশমিক ১ একর।
- খুলনার বিভিন্ন মৌজার ২৮ দশমিক ৯৭ একর।
- পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার ৫৪ দশমিক ৪৮ একর।
- পঞ্চগড় সদরের ১০ দশমিক ৭ একর।
উল্লেখিত স্থাবর সম্পত্তিগুলোর মোট পরিমাণ প্রায় একশ একর।
অস্থাবর সম্পদ:
- মোট ৩৬টি কোম্পানির শেয়ার।
- ২৬টি ব্যাংক হিসাবে রাখা ২২ কোটি ২৭ লাখ ১৮ হাজার ৩২১ টাকা।
দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন এসব সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের নির্দেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। দুদকের আবেদনে বলা হয়, জেমকন গ্রুপের মালিক কাজী নাবিল আহমেদ তার বৈধ আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং ভোগ দখলে রেখেছেন। এই অপরাধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা রয়েছে। দুদকের তদন্তে দেখা যায়, তিনি নিজ, যৌথ এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত ২০টি হিসাবে মোট ১০৯ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৯ টাকা লেনদেন করেছেন। এই লেনদেন তার ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা মূলধনের তুলনায় অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়।
মামলা তদন্ত চলাকালীন তার অবৈধ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের সন্ধান পাওয়ায় দুদক আশঙ্কা করে যে, আসামি এসব সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলতে পারেন। এতে মামলার তদন্তে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে এবং রাষ্ট্রের বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এমতাবস্থায়, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পদগুলো ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া জরুরি ছিল বলে আদালতকে জানানো হয়। আদালত দুদকের এই আবেদন গ্রহণ করে সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের পাশাপাশি আসামির দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৬ নভেম্বর কাজী নাবিলের ভাই কাজী আনিস আহমেদেরও ৫০ একর জমি ক্রোক এবং ১০৭ কোটি টাকার হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একইসাথে তার বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।



