Uncategorizedঅপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিপ্রতারনাপ্রশাসনবাংলাদেশসম্পাদকীয়

মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজি সহ ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: ২০২৪ সালের রমজান মাসে রাজধানীতে সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রির উদ্যোগের আড়ালে মৎস্য চাষীদের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মৎস্য অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রউফ এবং উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। চাষীদের অভিযোগ, সুলভ মূল্যে মাছ সরবরাহ কার্যক্রমের জন্য মৎস্য খাতের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সংগৃহীত প্রায় দুই কোটি টাকা এই দুই কর্মকর্তা গত দেড় বছরেও চাষীদের পাওনা পরিশোধ না করে নিজেরাই লুটে নিয়েছেন।

সম্প্রতি মৎস্য উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক লিখিত অভিযোগপত্রে এই চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির বিষয়টি উঠে এসেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের রমজান মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ বিক্রয়ের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছিল। সেই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুর রউফ, যিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের পদে আছেন। আর সদস্যসচিব ছিলেন এনএটিপির সাবেক প্রকল্প পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এই দুই কর্মকর্তা চাষীদের সংগঠন ‘ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফোয়াব)’ মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক খামারীদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে মাছ সংগ্রহ করেন। তবে কমিটি চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব রমজানের প্রথম দিনেই ১ লক্ষ টাকার নথিপত্র ব্যবহার করে মাত্র ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত এই কার্যক্রমের আওতায় মোট ৭ হাজার ২৪০ কেজি রুই, ৭ হাজার ৫৪৩ কেজি পাঙাশ, ১১ হাজার ৫৩১ কেজি তেলাপিয়া এবং ১ হাজার ৪৪৫ কেজি পাবদা মাছ বিক্রি করা হয়েছিল। সরবরাহ করা এই মাছের সম্পূর্ণ মূল্য চাষীরা পাননি। এখনো তাদের ২১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে বলে ফোয়াব অভিযোগ করেছে।

এছাড়াও, অভিযোগ গুরুতর—সদস্য সচিব এস এম মনিরুজ্জামান সরবরাহকৃত মাছ থেকে ৯০০ কেজি মাছ তার এক বন্ধুর সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন। মনিরুজ্জামান বর্তমানে অধিদপ্তরের চিংড়ি শাখার উপপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগেও তিনি সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প থেকে দুর্নীতির দায়ে বাদ পড়েছিলেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, গত বছর রমজানে (মার্চ-২০২৪) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রাজধানীতে ৩০টি স্থানে ২৮ রমজান পর্যন্ত মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম সুলভমূল্যে সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই বছরের ১০ মার্চ খামারবাড়ির প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান বেশ ঘটা করে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন।

ফোয়াবের তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তুলনামূলক কম দামে এই মাছ সরবরাহ করা হয়েছিল। মাছ সরবরাহ ছাড়াও ফোয়াব ভর্তুকি মূল্যে গাড়ি, বরফসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক মালামালও সরবরাহ করেছিল।

ফোয়াবের সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা রমজান মাসে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করেছি। রমজান মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। এর ফলে অনেক প্রান্তিক চাষী এখনো তাদের মাছ বিক্রির পুরো টাকা পাননি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ডিজি আবদুর রউফ গণমাধ্যমকে জানান, ‘বিক্রি ব্যবস্থাপনার তদারকির দায়িত্ব ছিল আমার। টাকা–পয়সা লেনদেনের বিষয়টি তৎকালীন ডিজি আলমগীর দেখতেন। তবে এটা ঠিক যে পুরো টাকা পরিশোধ হয়নি, কিছু বকেয়া হয়তো থাকতে পারে।’ অন্যদিকে, অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এস এম মনিরুজ্জামান কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button