দেশপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়াসাক্ষাৎকার

দুদক সংস্কারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির; গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়ায় উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশগুলো খসড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ থেকে বাদ দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, সরকারের এই উদ্যোগ দুদককে সত্যিকারের স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “খসড়া অধ্যাদেশটি বর্তমান আইনের তুলনায় কিছুটা উন্নত হলেও, এতে দুদক সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাদ দেওয়া বা অবমূল্যায়ন করা হয়েছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।”

ড. ইফতেখারুজ্জামান অভিযোগ করেন, কমিশনার নিয়োগ-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং কমিশনের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সংস্কার কমিশন ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সরকার এই প্রস্তাবের ‘পর্যালোচনা অংশ’, অর্থাৎ দুদকের দায়িত্ব পালনের সাফল্য-ব্যর্থতার ষাণ্মাসিক পর্যালোচনার সুপারিশটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, “এর ফলে জন্মলগ্ন থেকে দুদক যেভাবে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষের হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, সরকার সে অবস্থার পরিবর্তন চাইছে না বলে প্রতীয়মান হয়।”

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, বাছাই কমিটিতে সংসদের বিরোধী দলের প্রতিনিধির মনোনয়নের ক্ষমতা বিরোধীদলীয় নেতার পরিবর্তে স্পিকারের হাতে দেওয়া হয়েছে। এটি কার্যত সরকারি দলের প্রভাব জোরদার করার একটি ‘অশুভ প্রয়াস’ ছাড়া আর কিছু নয়। একই সাথে, দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসনের কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নাগরিককে কমিটির সদস্য হিসেবে প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে মনোনয়নের প্রস্তাব করা হলেও, সেটি রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, শর্টলিস্ট করা প্রার্থীদের নাম প্রকাশের প্রস্তাবিত বিধানটিও বাদ দিয়ে সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের সুযোগ বাতিল করেছে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ-১৩ এর উদ্ধৃতি দিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, দুদককে গতিশীল করতে কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য আইনে, শিক্ষায়, প্রশাসনে, বিচারে, শৃঙ্খলা বাহিনীতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশায় বা সুশাসন কার্যক্রমে নিয়োজিত সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু খসড়া অধ্যাদেশে তা ২৫ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি, কমিশনারের সংখ্যা তিনজন থেকে বাড়িয়ে পাঁচজন করার প্রস্তাবটিও উপেক্ষা করা হয়েছে, যা দুঃখজনক।

ড. জামান বলেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করাটা সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার শুধু আশু করণীয় অংশবিশেষ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন— দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, জনবল নিয়োগে স্বচ্ছতা, আমলাতান্ত্রিক প্রভাবজনিত অব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ক সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “সম্ভবত সরকার এবং এমনকি দুদকের ভেতরে কিছু স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহল রয়েছে, যারা কমিশনের অকার্যকরতার ফলে লাভবান হতে চায়। সরকার নিজেই সংস্কার কমিশন গঠন করে জাতীয় ঐকমত্যের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু আবার নিজেই সেগুলো উপেক্ষা করছে। যে সব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল, সেগুলো কোনো যুক্তিতে সরকার বা দুদক অবমূল্যায়ন বা এমনকি ধামাচাপা দিতে পারে?”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button