যৌনাঙ্গ সংযম: ইসলামের দৃষ্টিতে সতর ও দৃষ্টি হেফাজতের গুরুত্ব

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে ‘যৌনাঙ্গ সংযত রাখা’ বা সতরকে হেফাজত করার ধারণাটি অত্যন্ত ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল ব্যভিচার থেকে দূরে থাকাকে বোঝায় না, বরং কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার যাবতীয় পথ এবং তার প্রাথমিক কারণগুলোকেও নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধ দৃষ্টিপাত থেকে শুরু করে লজ্জাস্থান উন্মুক্ত করা পর্যন্ত সকল প্রকার হারাম কাজ।
যৌনাঙ্গ সংযত রাখার অর্থ হলো, ব্যভিচার, পুংমৈথুন, দুই নারীর পারস্পরিক ঘর্ষণে কামভাব পূর্ণ করা এবং হস্তমৈথুন সহ কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সকল অবৈধ ও হারাম পন্থা থেকে বিরত থাকা (দেখুন: সা‘দী, ফাতহুল কাদীর)। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা অবৈধ কামপ্রবৃত্তির প্রথম কারণ— দৃষ্টিপাত করা এবং তার সর্বশেষ পরিণতি— ব্যভিচার— এই দুটি বিষয়কে স্পষ্টত হারাম করেছেন (সূরা আন-নূর, ২৪:৩০)। এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে দৃষ্টিপাত ও ব্যভিচারের মধ্যবর্তী সব হারাম ভূমিকা, যেমন— স্পর্শ করা বা উত্তেজক কথাবার্তা শোনা।
আয়াতে বর্ণিত এই সংযমের প্রাথমিক ধাপ হলো দৃষ্টি সংযম। বিখ্যাত তাবেঈ আবিদা আস-সালমানী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যা দ্বারা আল্লাহ্র বিধানের বিরুদ্ধাচরণ হয়, তাই কবীরা গোনাহ। আর আয়াতে তার দুটি প্রান্তকে উল্লেখ করা হয়েছে— সূচনা (চোখ তুলে দেখা) এবং পরিণতি (ব্যভিচার)।
- জারীর ইবন আব্দুল্লাহ বাজালী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “ইচ্ছা ছাড়াই হঠাৎ কোনো বেগানা নারীর উপর দৃষ্টি পতিত হলে সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।” (মুসলিম: ২১৫৯)।
- হাদীসে আরও এসেছে, ‘প্রথম দৃষ্টি মাফ এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত গোনাহ।’ (আবু দাউদ: ২১৪৯)। এর অর্থ হলো, প্রথম দৃষ্টিপাতটি যদি অকস্মাৎ এবং অনিচ্ছাকৃত হয়, তবেই তা ক্ষমার্হ। ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথম দৃষ্টিপাতও ক্ষমার্হ নয়।
- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: ‘আল্লাহ্ তা‘আলা বনী আদমের উপর কিছু কিছু ব্যভিচার (যিনা) হবে জানিয়ে দিয়েছেন, তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। চক্ষুর যিনা হল তাকানো, ….।’ (বুখারী: ৬২৪৩, ৬৬১২)।
যৌনাঙ্গ সংযত রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিজের সতরকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করা থেকে বিরত থাকা (ফাতহুল কাদীর)।
- পুরুষের সতর: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষের জন্য সতর বা লজ্জাস্থানের সীমানা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন: “নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর।” (দারুকুতনী: ৯০২)। স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের এই অংশ খোলা হারাম।
- জারহাদে আল-আসলামী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণনা করেছেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মজলিসে তাঁর রান খোলা ছিল। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “তুমি কি জানো না, রান ঢেকে রাখার জিনিস?” (তিরমিযী: ২৭৯৬)।
- অন্য এক হাদীসে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “নিজের স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া বাকি সবার থেকে নিজের সতরের হেফাজত করো।” তিনি আরও বলেন: “কোন লোক যেন অপর লোকের লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায়, অনুরূপভাবে কোনো মহিলা যেন অপর মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে না তাকায়।” (মুসলিম: ৩৩৮)।
- একান্ত একাকীত্বেও আল্লাহ্কে স্মরণ করে লজ্জা করার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পথের হক ও বালকদের প্রতি দৃষ্টি:
রাস্তায় বসার সময় পথের হক আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে— “চক্ষু নত করা” (বুখারী: ২৪৬৫)। তদ্রূপ, দাড়ি-গোঁফ বিহীন বালকদের প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাকেও পূর্ববর্তী অনেক মনীষী কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন এবং অনেক আলেমের মতে এটি হারাম বলে তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে (ইবনে কাসীর)।



