চাঁপাইনবাবগঞ্জে লংমার্চ থেকে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের কঠিন জবাবের হুঁশিয়ারি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের কঠিন জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ’। গত ৮ নভেম্বর শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে “ভয়েস অব ল’ইয়ার্স বাংলাদেশ” আয়োজিত লংমার্চ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেন সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযায।
পথসভায় তিনি সীমান্ত পরিস্থিতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মোস্তফা আল ইহযায অভিযোগ করেন, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং নিরস্ত্র শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশি কৃষকদের একের পর এক হত্যা ও নির্যাতন করছে। তিনি তথ্য তুলে ধরে বলেন, “২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফ সদস্যদের হাতে প্রায় ৬০৭ জন বাংলাদেশি নিহত এবং ৭৬১ জন আহত হয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে বিএসএফ ৩৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। এছাড়াও, চলতি বছরের ৭ মে থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন করে ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে ‘পুশ-ইন’ শুরু করেছে, যা এখনো চলমান।

প্রধান সমন্বয়ক পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ভারত নতুন নতুন ফাঁদ তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের উগ্রপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ (UPDF) এবং জেএসএস (JSS) নেতা ও সদস্যদের কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এই উগ্রপন্থীরা সেনাক্যাম্প স্থাপনে বাধা দিচ্ছে, ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে মাইকেল চাকমার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য দিয়ে অঞ্চলজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে এবং রাষ্ট্রের সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে দেশবিরোধী সংগঠনগুলো সশস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করছে।
তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বিদ্যমান, তাই ষড়যন্ত্রকারীরা সমতলে সুবিধা করতে না পেরে এবার পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিশানা করেছে। তিনি ভারতীয় মিডিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রচারিত উসকানিমূলক তথ্যগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে দাবি করেন।
মোস্তফা আল ইহযায বলেন, ১৯২৯ সালে ভারত পার্বত্য চট্টগ্রামকে সম্পূর্ণ শাসন বহির্ভূত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যার ফলে উপজাতিরা তাদের জাতিসত্তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সেই ভারতই এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের জন্য মায়াকান্না করছে, যা কেবল উপজাতীয় সশস্ত্র উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার নীলনকশার অংশ।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় রাষ্ট্র পরিচালকদের উদ্দেশ্য করে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযায কঠিন হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ড নিয়ে ভারতীয় ষড়যন্ত্র যদি অনতিবিলম্বে বন্ধ করা না হয়, তাহলে আমরাও নদীয়া, মালদহ, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, চব্বিশ পরগনা, দার্জিলিং, মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর, কোচবিহার, করিমগঞ্জ, আসাম, ত্রিপুরা, কলকাতাসহ বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দেব এবং অবিভক্ত বাংলা পুনর্গঠন করে ছাড়ব।”
পথসভায় আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন (সঞ্চালনায়), সরকারি আইন কর্মকর্তা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন মজুমদার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসহাক আলী, ব্যারিস্টার গোলাম মোস্তফা তাজ, অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন সম্রাট, অ্যাডভোকেট মাঈন উদ্দিন ফারুকী, সাংবাদিক জালাল আহমদ, আবদুল্লাহ আল নোমান মজুমদার, আবদুল আলীম এবং ভয়েস অব ল’ইয়ার্স বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ-উজ জামান।



