জিন আসর বা কুপ্রভাবের লক্ষণ: ঘুম ও জাগরণে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করা যায়
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: আধিভৌতিক বিষয়বস্তু নিয়ে সমাজে নানা ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত আছে। ইসলামের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্কৃতিতে জিন বা অশরীরী আত্মার প্রভাব বা আসর নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল দেখা যায়। যারা নিজেদের মধ্যে বা পরিচিতদের মধ্যে জিনের প্রভাব বা কুপ্রভাবের লক্ষণ খুঁজে পান, তাদের জন্য উপসর্গগুলো জানা জরুরি। লক্ষণগুলোকে সাধারণত ঘুমন্ত ও জাগ্রত—এই দুই অবস্থায় ভাগ করা যায়।
(ক) ঘুমন্ত অবস্থায় লক্ষণসমূহ:
জিনের প্রভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের ধরনে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভয়ংকর ও ভীতিকর স্বপ্ন দেখা এবং ঘুম থেকে আচমকা চমকে ওঠা। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়শই উদ্বিগ্নতা বা অনিদ্রায় ভোগেন, যার ফলে ঠিকঠাক ঘুম হয় না।
স্বপ্নের দৃশ্যে একটি ধারাবাহিকতা দেখা যায়; যেমন—বারবার গোরস্থান, পরিত্যক্ত বা জনমানবহীন নির্জন জায়গা দেখা অথবা নিজেকে সেখানে দেখতে পাওয়া। এছাড়া স্বপ্নে কুকুর, বিড়াল, বাঘ, সিংহ, সাপসহ অন্যান্য হিংস্র প্রাণীকে তাকে আক্রমণ করতে বা তাড়া করতে দেখা একটি পরিচিত লক্ষণ।
অনেক সময় ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ, যেমন—কথা বলা, চিৎকার করা, হাসি-কান্না বা গোঙানো দেখা যায়। কেউ কেউ ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া করতে না পারার এক অদ্ভুত অনুভূতি প্রকাশ করেন, যেন কোনো ভারী বস্তু তাকে চেপে ধরেছে। আবার অনেকে অস্বাভাবিক আকৃতির মানুষ দেখেন—যা খুব লম্বা, খুব কালো বা অনেক খাটো হতে পারে। ঘুমের মধ্যে হাঁটাচলা বা দৌড়ানো, উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা এবং তার ফলে ঘুম থেকে চমকে ওঠাও এই লক্ষণের অংশ।
অশ্লীল বা কুরুচিপূর্ণ জিনিস স্বপ্নে দেখা এবং শারীরিক হেনস্থা বাস্তবে অনুভব করাও একটি গুরুতর লক্ষণ। এছাড়া পুরুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রায় স্বপ্নদোষ হওয়ার মতো বিষয়গুলোও এর অন্তর্ভুক্ত।
(খ) জাগ্রত অবস্থায় লক্ষণসমূহ:
জাগতিক জীবনেও আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণ ও মানসিকতায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এটি মূলত ইবাদত বিমুখতা দিয়ে শুরু হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমান্বয়ে আল্লাহবিমুখ হতে থাকেন এবং ইবাদত বা উপাসনায় তার অনীহা জন্ম নেয়।
পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও আযান শুনলে অস্বস্তি লাগা এবং নিজে তেলাওয়াত করতে গেলে নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। অনেক সময় জাগ্রত অবস্থায়ও স্বপ্নের মতো জিনিস দেখতে পাওয়া বা অদৃশ্য কারো আওয়াজ শুনতে পাওয়ার মতো হ্যালোসিনেশন দেখা যায়।
আচমকা ভিন্নধর্ম ও ধর্মীয় কার্যকলাপের প্রতি তীব্র আকর্ষণ জন্ম নেওয়া এবং অন্যান্য ধর্মের জিনিস স্বপ্নে বা চোখের সামনে দেখা যেতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত বা অস্বাভাবিক ঋতুস্রাব দেখা যায়, যা চিকিৎসা সত্ত্বেও সহজে ভালো হয় না।
আচরণের ক্ষেত্রে দেখা যায়—কোনো কাজেই মন না বসা, মনোযোগের অভাব, সামান্য কারণেই অতিরিক্ত রেগে যাওয়া, কান্নাকাটি, দুর্ব্যবহার, ভাঙচুর ও গালিগালাজ করা; যার জন্য তিনি পরে অনুতপ্ত হন। অনেক সময় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অস্বাভাবিক আচরণও করতে পারেন।
শারীরিক ও মানসিক কষ্টের মধ্যে থাকে—প্রচণ্ড অলসতা, অবসন্নতা, দুশ্চিন্তা, হতাশা, অস্থিরতা, আতঙ্কভাব। শরীরের কোনো অংশ ভারী ভারী লাগা কিংবা কোনো অঙ্গে তীব্র ব্যথা বা প্যারালাইজড হওয়া—যা চিকিৎসায়ও সারানো সম্ভব হয় না।
এছাড়া, একা একা কারো সাথে কথা বলা, হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়া, অজ্ঞান বা বেহুঁশ হয়ে যাওয়া, দাঁতে দাঁত লেগে ফিট খাওয়া (মৃগীরোগের মতো), বুক অতিরিক্ত ধড়ফড় করা বা অকারণে শ্বাসকষ্ট হওয়া এই উপসর্গের অন্তর্ভুক্ত। অনেক সময় শরীরে আঁচড়ের দাগ বা নীলচে গোল দাগও পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ঘন ঘন বমিভাব বা বমি হওয়া এবং সিজোফ্রেনিয়া বা মৃগীরোগের মতো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়াও জিনের আসরের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
(বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে ধর্মীয় ও মানসিক—উভয় দিক থেকেই যথাযথ সহায়তা নেওয়া উচিত।)



