ইসলাম ধর্ম

আল্লাহর যিকিরের অতুলনীয় ফযীলত: যা জীবিত ও মৃত মানুষের পার্থক্য গড়ে

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: আল্লাহর যিকির বা স্মরণ ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ একটি ইবাদত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিভিন্ন বাণীতে এই আমলের অসাধারণ ফযীলত ও গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যিকির কেবল জিহ্বার একটি নড়াচড়া নয়, বরং এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে নৈকট্য সৃষ্টির প্রধানতম মাধ্যম। নিচে রাসূল (সা.)-এর সেই বিশেষ বাণীগুলো তুলে ধরা হলো, যা যিকিরের গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে।

জিহ্বা থাকবে সর্বদা সজীব: আল্লাহর স্মরণকে দৈনন্দিন জীবনে সহজে পালনের উপায় হিসেবে দেখিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (সা.)। আবদুল্লাহ ইবন বিশর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি একবার প্রশ্ন করেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইসলামের বিধি-বিধান তো আমার জন্য অনেক হয়ে গেছে, তবে আমাকে এমন কিছু বিষয় বলে দিন যাকে আমি দৃঢ়ভাবে পালন করতে পারি।” এর উত্তরে মহানবী (সা.) বলেন, “তোমার যবান যেন সব সময় আল্লাহর যিকিরে আর্দ্র থাকে।” (তিরমিযী ৩৩৭৫)

জীবিত ও মৃতের মধ্যকার উপমা: যিকরের মাধ্যমে মানুষ কীভাবে আধ্যাত্মিক দিক থেকে সজীব থাকে, সে বিষয়ে একটি জোরালো উপমা দিয়েছেন রাসূল (সা.)। আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে তার প্রতিপালকের যিকর করে, আর যে যিকর করে না, তাদের উপমা হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তি।” (বুখারী ৬৪০৭) অর্থাৎ, আল্লাহর স্মরণকারী ব্যক্তি জীবন লাভ করেন আর স্মরণ থেকে বিরত ব্যক্তিরা মৃতবৎ।

পৃথিবীর বুকে সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ: সম্পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) পার্থিব প্রাচুর্যের চেয়ে আধ্যাত্মিক ও মানসিক প্রশান্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “উৎকৃষ্ট সম্পদ হল (আল্লাহ তা’আলার) যিকরকারী জিহ্বা, কৃতজ্ঞ অন্তর ও ঈমানদার স্ত্রী, যে স্বামীকে দ্বীনদারির ব্যাপারে সহযোগিতা করে।” (তিরমিযী ৩০৯৪, ইবনু মাজাহ ১৮৫৬) এই হাদিস অনুযায়ী, সর্বদা আল্লাহর স্মরণকারী জিহ্বা সর্বোত্তম সম্পদের মধ্যে অন্যতম।

বান্দার নিকট আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য: আল্লাহর স্মরণ বান্দাকে সরাসরি তাঁর নৈকট্য দান করে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বক্তব্য তুলে ধরেন: “আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দা যখন আমার জিকির করে, আমার জন্যে তার দুই ঠোঁট নড়ে তখন আমি তার কাছে থাকি।” (ইবনু মাজাহ ৩৭৯২) এই ঘোষণা যিকিরের সময় বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের ইঙ্গিত বহন করে।

কিয়ামতের দিনে আল্লাহর বিশেষ ছায়া: কিয়ামতের মহাবিপর্যয়ের দিনে আল্লাহর আরশের নিচে বিশেষ আশ্রয় লাভের অন্যতম উপায় হলো নির্জনে যিকির করা। আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) সাত শ্রেণীর মানুষের কথা বলেছেন, যাদেরকে আল্লাহ কিয়ামতের কঠিন দিনে তাঁর বিশেষ ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন। তন্মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ হলো: “ঐ মানুষ যিনি একাকী আল্লাহর যিকর করেছেন আর তাঁর চোখ থেকে অশ্রুর ধারা নেমেছে।” (সহীহ বুখারী, ৬৬০)

এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহর যিকির কেবল একটি আনুষ্ঠানিক ইবাদত নয়, বরং এটি বান্দার আধ্যাত্মিক জীবনের মূল ভিত্তি এবং কিয়ামতের দিনে নাজাত লাভের প্রধান উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button