অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিপ্রশাসনবাংলাদেশসম্পাদকীয়

পলাতক নওফেল-আবুহেনার সঙ্গে কুখ্যাত মুশতাক: ‘ফ্যাসিষ্ট হাসিনার’ রায় ঘিরে নাশকতার ব্লুপ্রিন্ট, প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতা!

ঢাকা: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার চর হিসেবে অভিযুক্ত মতিঝিল আইডিয়ালের কুখ্যাত খন্দকার মুশতাক আহমেদ এবং ৫ই আগস্টের পর বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া সাবেক সচিব আবুহেনা মোরশেদ জামান—এই তিনজনের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিষ্ট হাসিনার’ বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে বড় ধরনের নাশকতার মহাপরিকল্পনা তৈরির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারী সূত্র জানিয়েছে, নওফেল ও আবুহেনা মোরশেদ জামান পলাতক থাকলেও, প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদ-সংশ্লিষ্ট একটি চক্রের সক্রিয় সহযোগিতায় খন্দকার মুশতাক আহমেদ বহাল তবিয়তে তাঁর এই নাশকতার নীলনকশা বাস্তবায়নে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু জানা সত্ত্বেও প্রশাসনের এই ফ্যাসিবাদী চক্রটি তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ায় অনেকে মনে করছেন, প্রশাসন যেন এই বিষয়ে পিঠে কুলো বেঁধেছে ও কানে তুলো দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর যেখানে বায়তুল মোকাররমের খতিব থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ কর্মীরা পর্যন্ত আত্মগোপনে বা পলাতক, সেখানে প্রশাসনিক মদদে কুখ্যাত মুশতাক আহমেদকে গ্রেফতার বা আত্মগোপনে যেতে হয়নি।

অভিযুক্ত খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে শতাধিক শিশু, ছাত্রী ও পরনারীর যৌন নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণ, দুর্নীতি ও প্রতারণার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ভুয়া দাতা ভোটার কর্তৃক নির্বাচিত ঢাকাস্থ মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক ‘ভূয়া দাতা সদস্য’ এবং ভিন্নদেশীয় গোয়েন্দা সংস্থার চর বলেও জানা যায়। আমেরিকান প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে উল্লেখ করেছেন যে মুশতাক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একাধিকবার গোপনে বৈঠক করেছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যার একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র সামনে বালুর ট্রাক দ্বারা অবরোধ ও বিষাক্ত পিপার স্প্রে হামলার অন্যতম মূলহোতা ও মাস্টারমাইন্ড ছিলেন মুশতাক আহমেদ। এই বালুর ট্রাকগুলো ছিল তার ‘এসেনশিয়াল ইষ্টাব্লিশমেন্ট’ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির। বালুর ট্রাককান্ড মামলার এজাহারভুক্ত আসামি গুলশান ডিবি’র উপ-কমিশনার শেখ নাজমূল আলম কুখ্যাত খন্দকার মুশতাক আহমেদের আত্মীয়।

এছাড়াও, ২০১৫ সালের ২০, ২১ ও ২২ এপ্রিল ঢাকাস্থ ফকিরাপুল, কারওয়ান বাজার ও বাংলামটরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলারও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি। ওই গাড়িবহর হামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়ও খন্দকার মুশতাক আহমেদের আত্মীয় এবং তার সকল কুকর্মের সহযোগী।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জননেতা মির্জা আব্বাসের বাসায় ২০১৭ সালে র‍্যাব পোশাকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের দিয়ে যে নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়, তা সালমান এফ রহমান এবং কুখ্যাত খন্দকার মুশতাক আহমেদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে, ২০১৮ সালে মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের নির্বাচনী জনসংযোগে দফায় দফায় হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও তাদের (সালমান এফ রহমান, মুশতাক আহমেদ ও সাবের হোসেন চৌধুরী) বিরুদ্ধে রয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে খন্দকার মুশতাক আহমেদ মুজিব কোট পরিধান করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হালুয়া রুটি খেয়েছেন, দুর্নীতি ও লুটপাট করেছেন এবং আওয়ামী লীগের কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বিএনপি নির্মূলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যার পেছনেও ভূমিকা রাখেন।

কিন্তু ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর তিনি গা থেকে মুজিব কোট খুলে ওয়ারড্রোবে সংরক্ষণ করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য আওয়ামী লীগকে সংগঠিত ও পুনর্বাসন করার গোপন মিশন নিয়ে বিএনপির ছত্রছায়ায় মাঠে নেমেছেন।

নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে খাতায় নাম লেখালেও ঢাকায় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের কিলিং মিশনসহ সকল অপকর্মের সফল বাস্তবায়নকারী। একসময় সাবের হোসেন চৌধুরীর পাশে মুজিব কোট পরিহিত মুশতাককে দেখে মনে হতো তিনিই যেন ঢাকা-৯ আসনের এমপি।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক জিয়ার নির্দেশ অমান্য করে এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নরসিংদী বিএনপির কিছু অর্থলোভী ব্যক্তি ২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মুশতাক আহমেদকে (যিনি শতাধিক শিশু ও নারী নির্যাতনকারী, ধর্ষক, লম্পট, প্রতারক হিসেবে পরিচিত) আবার দলে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নরসিংদীর জনসাধারণ এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দলীয় হাই কমান্ডের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে।

তথাকথিত শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়েও মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে চরম প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স করার দাবি করলেও এই তথ্য মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এমনকি মতিঝিল আইডিয়ালের সেই বহুল আলোচিত বিতর্কিত অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে সহপাঠী দাবি করাও ছিল তাদের সাজানো নাটক। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষর; লেখাপড়ার সঙ্গে তার আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বিভিন্ন লোকের কাছে শুনে দু-একটি ইংরেজি বাক্য আয়ত্ত করে জনসাধারণের কাছে নিজেকে স্নাতকোত্তর হিসেবে দাবি করে চাপাবাজি করেন।

টাকার বিনিময়ে আনাড়ি লোক দিয়ে তিনি একটি বই লিখিয়েছিলেন, যার কভারে চাকচিক্য থাকলেও ভেতরে ছিল “গরুর রচনা” লেখা। বইমেলায় প্রতারিত ক্রেতাদের হাতে তিনি উত্তম-মধ্যম খেয়ে জুতা ফেলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন বলেও জানা যায়। জনসাধারণের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেকে হুমায়ুন আহমেদ বানানোর খায়েশ নিয়ে বইমেলায় গিয়ে পৃথিবী নিকৃষ্টতম প্রাণীর উপাধী নিয়ে ফিরে আসেন তিনি। তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সত্যতা প্রমাণের জন্য এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স সার্টিফিকেট যাচাইয়ের দাবি করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button