জাতীয় ঈদগাহের ড্রামে খণ্ডিত লা’শ: সন্দেহের কেন্দ্রে বন্ধু জরেজ মিয়া
রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক হ-ত্যা, ঢাকায় কালেকশন করতে গিয়ে নিখোঁজ; স্ত্রীকে ফোন করে অভিযুক্তের বিভ্রান্তিকর তথ্য
রংপুর/ঢাকা: রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে একটি ড্রাম থেকে ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের খণ্ডিত লা-শ উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বন্ধু জরেজ মিয়ার দিকে সন্দেহের তীর। নিহত আশরাফুলের স্ত্রী লাকী বেগমের দাবি, “টাকার লোভে আমার স্বামীক মা-রি ফেলছে।” তিনি স্বামী হ-ত্যার বিচার চেয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ জাতীয় ঈদগাহের ফটকের কাছ থেকে লা-শটি উদ্ধার করে। আঙুলের ছাপ নিয়ে লা-শটি শনাক্ত করা হয়। নিহত আশরাফুল হকের (৩২) বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামে। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করতেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর ব্যবসার কাজে বন্ধু জরেজ মিয়ার (মালয়েশিয়া ফেরত) সঙ্গে আশরাফুল ঢাকায় আসেন। ঢাকা আসার আগে তিনি ছয়-সাত হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছিলেন, কিন্তু সেই টাকা পাননি। ঢাকায় তিনি পাওনা টাকা কালেকশনের জন্য গিয়েছিলেন।
আশরাফুলের স্ত্রী লাকী বেগম বিলাপ করে বলেন, ঢাকা যাওয়ার আগে বস্তা আলু বিক্রির টাকা না পাওয়ায় আমার স্বামী সেই টাকা কালেকশনের জন্য জরেজকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। তার অভিযোগ, অভিযুক্ত জরেজ মিয়া তাঁর স্বামীর ফোন ধরে মিথ্যা বলতেন, কখনও বলতেন “আমাক বসিয়ে রেখে কালেকশনে গেছে” আবার কখনও বলতেন “আমি কিছু জানি না।”
আজ শুক্রবার বদরগঞ্জে আশরাফুলের বাড়িতে প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। শোকে স্তব্ধ বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের আহাজারি চলছে। নিহত আশরাফুল হক তাঁর বাবার একমাত্র ছেলে। তিনি স্ত্রী, ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে (সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী) ও ৭ বছর বয়সী এক ছেলে (প্রথম শ্রেণির ছাত্র) রেখে গেছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, আশরাফুলের বন্ধু জরেজ মিয়া মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন থাকার পর মাত্র দেড় মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন এবং এরপর থেকেই আশরাফুলের ব্যবসায়িক কাজে যুক্ত হন। জরেজ মিয়া জাপানে যাওয়ার জন্য আশরাফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন বলেও জানা যায়।
আশরাফুলের ছোট শ্যালক রেজওয়ান হক অভিযোগ করেন, জরেজ মিয়া দুলাভাইয়ের সব কিছু জানতেন। দু’জন একই হোটেলে ছিলেন, একসঙ্গেই খাওয়া-ঘুম হতো। কিন্তু হঠাৎ করে জরেজ মিয়া দুলাভাইয়ের ফোন ধরে প্রথমে ‘বাইরে গেছে’ এবং পরে ‘চট্টগ্রাম গেছে’ বলে জানান। শেষমেশ ফোনটি ডাস্টবিনে পাওয়া যায়।
লা-শ উদ্ধারের পর পুলিশ জরেজ মিয়ার বাবা মোয়াজ্জেককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে এবং পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনও জব্দ করেছে।
জরেজ মিয়ার স্ত্রী উম্মে কুলসুম দাবি করেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের বন্ধুত্ব। তিনি জানতেন, জরেজ ও আশরাফুল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ব্যবসার টাকা কালেকশন করতে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে যখন তাঁর কথা হয়, তখনও জরেজ চট্টগ্রামে থাকার কথাই বলেছিলেন। ঢাকায় থাকার বিষয়টি তিনি জানতেন না।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মূল মামলাটি ঢাকাতেই হবে। তবে ঢাকা থেকে আসা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দল আটক একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় রয়েছে এবং তাঁরা সব ধরনের সহযোগিতা করছেন।



